জিয়াউর রহমান লিটন-

দিরাইয়ে পৃথক পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পদোন্নতি নেওয়ার  অভিযোগ ওঠেছে। অনিয়ম জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারি শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে পদোন্নতি নিয়েছেন তারা। উপজেলার সাদিরপুর স্কুলের শিক্ষক হাবিবুর রহমান, পানগাঁও স্কুলের শিক্ষক অপূর্ব কুমার দাস, ধনপুর চন্ডিপুর স্কুলের শিক্ষক মো: ফুরকান আলী, নোয়ারচর স্কুলের শিক্ষক হিরেন্দ্র কুমার রায়, ডাইয়ারগাঁও স্কুলের শিক্ষক বলরাম দাস। এদিকে কাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এডিপিও) মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন পুর্নাঙ্গ তদন্তে দিরাই আসছেন বলে জানাগেছে। কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী অবৈধ  পদোন্নতির বিষয়ে তদন্ত করার দায়িত্ব দেন সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনকে। কিন্তু রহস্য জনক কারনে তখন তদন্ত করলেও প্রতিবেদন দেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা যায়। তবে  এডিপিও মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলছেন, অভিযোগ পাইছি, কিছু দিন আগে বিষয়টি তদন্তে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আমি তদন্ত শুরু করেছিলাম, পুর্নাঙ্গ তদন্ত করতে পারি নাই, তখন অভিযুক্ত শিক্ষকদের কাগজপত্র দিতে বলছিলাম কিন্তু তারা  সেগুলো দেয় নাই। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বলছি পুর্নাঙ্গ তদন্ত করতে দিরাই আসছি তাদেরকে কাগজ পত্র নিয়ে হাজির হওয়ার জন্যে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীল সুত্রে জানাগেছে, নিয়োগকালীন সময় এসব শিক্ষকদের ৫ জনের বয়স ১৮ বছরের কম ছিল। এর মধ্যে হাবিবুর রহমানের বয়স ১৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন, বলরাম দাসের বয়স ১৫ বছর ৬ মাস ৯ দিন, হিরেন্দ্র কুমার রায় এর বয়স ১৫ বছর ১১ মাস, অপূর্ব কুমার দাসের বয়স ১৬ বছর ২ মাস ২৫ দিন, ফুরকান আলীর বয়স ১৭ বছর ৭ মাস ৯ দিন। উপ-পরিচালক প্রশাসন আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস, স্বাক্ষরিত বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিট, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়, শিক্ষাভবন, ঢাকা থেকে ০৫/০২/২০০৮ ইং তারিখে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রেরিতপত্রের সাথে সংযুক্ত এসব শিক্ষকদের চাকুরী সংক্রান্ত তথ্যাবলী থেকে জানা যায়, সহকারি শিক্ষক অপূর্ব কুমার দাস এর জন্ম তারিখ ১০-১০-১৯৭৪ ও চাকুরীতে যোগদানের তারিখ-  ০৫-০১-১৯৯১। হাবিবুর রহমানের জন্ম তারিখ ০২-০১-১৯৭৫ ও যোগদানের তারিখ ০১-০১-১৯৯০। হিরেন্দ্র কুমার রায় এর জন্ম তারিখ ০১-০২-১৯৫৮ ও যোগদানের তারিখ ০১-০১-১৯৭৪। বলরাম দাসের জন্ম তারিখ ০১-০৭-১৯৭৪ ও যোগদানের তারিখ ১০-০১-১৯৯০।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, দিরাইয়ের অধিকাংশ স্কুলই রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে ১৯৯৪-৯৫ সালে। কিন্তু এর আগেই সরকার পরিপত্র জারি করে যে, ০১-০৭-১৯৯২ ইং তারিখের পর বে-সরকারি স্কুল নিয়োগ পেতে হলে সরকারি শিক্ষক নিয়োগের যে যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে তা প্রযোজ্য হবে। যে কারণে এসব শিক্ষকরা নিয়োগপত্র/যোগদানপত্র পরিবর্তন করতে পারেননি। নীতিমালা অনুসারে সহকারি শিক্ষক পদে, নিয়োগকালীন সময় আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতির কোন সুযোগ নেই। তা ছাড়াও এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক বা সমমানের পরীক্ষার মধ্যে অন্তত যে কোন একটিতে দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষকের উচ্চতর স্কেল অনুমোদন করিয়ে আনেন বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরীক্ষন ইফনিট শিক্ষা ভবন ঢাকা থেকে। এতে উপজেলা শিক্ষা কমিটির কোন প্রত্যয়ন নেই। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক অপুর্ব কুমার দাস দাবি করছেন- উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও জেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে চাকুরীর নীতিমালা যথাযথভাবে পূরণ করেই ৫ জন শিক্ষক পদোন্নতি পেয়েছেন, জালিয়াতির অভিযোগ সঠিক নয়, তদন্তের বিষয়টি আমি জানিনা, সকলকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন- ২০১৩ সালের নীতিমালা অনুসারে যে সকল যোগ্যতা থাকার প্রয়োজন ওদের ক্ষেত্রে অনেক ত্রুটি আছে। ত্রুটি থাকলেও উনারা কিভাবে করে নিয়ে আসছেন তা আমার জানা নেই।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn