দীর্ঘমেয়াদী সংকটের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন
মোঃ ফাহাদ হোসেন।।কোভিড -১৯ পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সরকারি নির্দেশনানুযায়ী, তিন অক্টোবর পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের মেয়াদও বেড়েছে আরো একমাস। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পরেছে শিক্ষাব্যবস্থা। যার মাশুল গুনতে হবে হাজার হাজার শিক্ষানবিশদের। দীর্ঘদিন বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ নিয়েছে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে চায়। এতে করে হয়তো শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে তাদের পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। কিন্তু অনলাইন শ্রেনিকার্যক্রমের মাধ্যমে সেশন শেষ করার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের থাকলেও সৃষ্টি হচ্ছে বেশকিছু সমস্যা ও জটিলতা। অনলাইন ক্লাস এবং সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেনিকক্ষে বসে ক্লাস করার মধ্যে রয়েছে বিশাল তফাৎ। বিশেষ করে, বিজ্ঞান ভিত্তিক বিভাগের বিষয়গুলো অনেকটাই জটিল। অনলাইন ক্লাশে প্রশ্ন করার সুযোগটা তুলনামূলক কম হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সকল বিষয় সঠিকভাবে বুঝতে খানিকটা হিমশিম খাচ্ছে। আবার, অনলাইনে শতভাগ মনোযোগ ধরে রাখা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
অন্যদিকে, অনলাইন শ্রেনিকার্যক্রম পদ্ধতি আমাদের দেশে নতুন হওয়ায় বয়স্ক শিক্ষকগণের পক্ষে অনলাইনে পাঠদান বেশ কষ্টসাধ্য। এমনকি অনেক শিক্ষকের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় খামখেয়ালিপনা। রীতিমত মনে হয় কেবলমাত্র দায়ে পরে ক্লাস নিচ্ছেন এবং কোনভাবে ক্লাসটি শেষ করলেই হাফ ছেড়ে বাচঁবেন। ফলশ্রুতিতে প্রশ্ন উঠে অনলাইন ক্লাসের গুণগত মান নিয়ে। এভাবে অর্জিত শিক্ষা হয়তো ক্ষণিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিবে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এই অর্জিত ডিগ্রি কেবল পুঁথিগত বিদ্যা হয়ে থাকবে।এছাড়াও ডিভাইস সংকট ও নিম্নগতির ইন্টারনেটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ ক্লাসটি নির্বিঘ্নে করতে পারছে না। সৃষ্টি হচ্ছে বৈষম্য। যার ফলে, কোর্সগুলো শেষ করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আবার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিভিউ ক্লাস নেওয়া জরুরি। এভাবে কোর্স শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরর্বতী সময়ে প্রয়োজনীয় সময় না দিয়ে সেমিষ্টার বা ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয়ের বড় আশংকাও রয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে সোনালি ক্যাম্পাস জীবনের ছয়টি মাস। যার ক্ষতি পূরণ করতে প্রয়োজন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি যথার্থ পরিকল্পনা। লেখক- শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।