মিসবাহ উদ্দীন আহমদ ::
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম রাজনৈতিক দল। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট অঞ্চলেও বেশ সুসংগঠিত। সিলেট অঞ্চলের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলটির সহযোগি ও অঙ্গসংগঠগুলোর শাখা প্রশাখা নগর-শহর পেরিয়ে ঠাই করে নিয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও। আর টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত থাকার সুবাদে দলটির জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। ক্ষমতার ফায়দা হাসিলের আশায় কিংবা দলটির নীতি-নৈতিকতার ভালোবাসায় রাজনীতির মাঠে-ময়দানে ক্রমশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর পতাকাতলে ভীড় বাড়ছেই।এই রীতি ইদানীং চোখে পড়ছে বাংলাদেশের আদি রাজনৈতিক ইতিহাস ও আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম স্মৃতিবাহি সিলেট অঞ্চলেও।
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতে বেশ সুসংগঠিতই বলা চলে। শুধু মাত্র শীর্ষ পদটি ছাড়া। ২০১৫ সাল থেকে দুই বছর ধরে জেলা শাখার সভাপতি পদটি চলছে ‘ভারপ্রাপ্ত’ দিয়েই। ২০১১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানর। তিনি বেশ ভালোভাবেই একাধারে সামাল দিচ্ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্ব। হঠাৎ জটিল রোগ ধরা পড়ে সুফিয়ানের। দেশ-বিদেশে দীর্ঘ চিকিৎসার পরও হার মানতে হয় বয়োজ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিবিদকে। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সাগরদিঘীরপাড়স্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন সুফিয়ান। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে গোটা সিলেট।

শূণ্য হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের সিলেট জেলা শাখার সভাপতির পদটি। শূণ্য হয়ে পড়ে সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদটিও। এই দু’টিতেই দায়িত্বপান প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। এরপরে সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয় লাভের মাধ্যমে তিনি প্রশাসক থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। কিন্তু দলীয় পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বটি এখনো বহাল রয়েছে তাঁর কাঁধে। দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে তিনি চালাচ্ছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগকে। তবে বয়সের ভারে তিনি সবসময় দলের সকল কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন না। তখন অন্য কাউকে দিয়ে চালানো হয় দায়িত্ব।
২০১১ সালের ২২ নভেম্বর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওই দুইটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছিলেন। তখন সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে সভাপতি ও আসাদ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর এবং আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানকে সভাপতি ও তৎকালীন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।এর আগে ২০০৫ সালের অক্টোবরে জেলা ও নভেম্বরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে পাঁচ সদস্যের জেলা ও দুই সদস্যের মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তা হয়নি।
বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি লুৎফুর রহমান চৌধুরীকে আনা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে। এরপরের সহ-সভাপতি ইফতেখার হোসেন শামীম আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর স্থানটিও শূণ্য। কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে আরোও আছেন ইমরান আহমদ এমপি, মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, আমির উদ্দিন চৌধুরী সাদেক, অ্যাডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ।
দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলা শাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন- বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোর খোঁজ-খবর রাখেন। যার প্রমাণ ইতোমধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলার কমিটি স্থগিতকরণের মধ্যে দিয়ে পাওয়া গেছে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমানের প্রতি সম্মান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন- দলের জন্য তার অনেক ত্যাগ রয়েছে। কিন্তু তিনি এখন বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। তার উপর তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত বলে মনে করেন তারা।আরোও কয়েকজন নেতার দাবি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সুসংগঠিত করা হোক। ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে পূর্ণ সভাপতি করা হোক কিংবা সহ-সভাপতি বা সম্পাদকদের মধ্যে থেকে কাউকে সভাপতি করা হোক।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn