আবুল খায়ের প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে নারী নির্যাতন মামলা। জমি-জমা নিয়ে বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা, বিনা কারণে তালাকের পর দেনমোহর আদায়, পরকীয়াজনিত কারণ, প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া মেয়েকে উদ্ধার, এমন নানা ঝামেলায় এ আইনে মামলা করে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাত্ প্রতিপক্ষকে দমাতে কথায় কথায় ঠুকে দেওয়া হচ্ছে নারী নির্যাতন মামলা। ফলে বিনা অপরাধে হয়রানির শিকার হচ্ছেন  অনেক ভুক্তভোগী। পুলিশ সদর দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, নারী নির্যাতন আইনে জটিলতা আছে যা সংশোধন করা প্রয়োজন। বিধান অনুযায়ী, অভিযোগকারী থানায় অভিযোগ করলে মামলা নিতে হয়। যার অধিকাংশই সঠিক থাকে না। বলা চলে, আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ২১৯ টি, ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৭৩০টি, ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ৪৮৬টি, ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৬১৩টি, ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ৯১টি, ২০১২ সালে ১৯ হাজার ২৯৫টি এবং ২০১১ সালে ১৯ হাজার ৬৮৩টি। তদন্তে দেখা গেছে, এসব মামলার ৯০ ভাগই ভুয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নারী নির্যাতন মামলায় আসামি তিন মাস আগে জামিন পান না। ফলে সমাজের কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পুলিশের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রতিপক্ষকে দমাতে বড় অস্ত্র হিসেবে আইনটি ব্যবহার করছে। বাদী থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর মামলা গ্রহণের আগে তদন্তের নিয়ম থাকলেও অনেক সময় তদন্ত ছাড়াই মামলা গ্রহণ করা হচ্ছে। এমনকি এ আইনে মামলা নিতে পুলিশের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও অনেক সময় হস্তক্ষেপ করেন। অন্যদিকে আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে মিথ্যা মামলা করে পার পেয়ে যাচ্ছেন বাদী। আর ভুক্তভোগী হন তথাকথিত ‘আসামিরা’। যদিও নারী নির্যাতন মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের বিধান আছে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে গেলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। তবে ভুক্তভোগীরা নানা ধরনের হয়রানির কারণে বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের থেকে বিরত থাকে। অনুসন্ধানে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। সারা দেশে বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করে দেখেছেন, টাকার বিনিময়ে অনেক সময় ডাক্তাররা সনদ প্রদান করেন। যে সনদ ব্যবহার করে বাদীরা থানায় মামলা করে। হাসপাতালের এক শ্রেণির দালাল চক্র নির্যাতনের সনদ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করে।
২০০৯ সালে তত্কালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ এক বছরের নারী নির্যাতন আইনে করা মামলা নিয়ে তদন্ত করে দেখেছিলেন, ৯ হাজার মামলার মধ্যে ৭ হাজারই ভুয়া। তখন ওইসব মামলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর নারী নির্যাতনের নামে সমাজে হয়রানি কিছুটা কমে আসলেও গত কয়েক বছর ধরে তা আবার বেড়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ প্রণয়নের  মূল উদ্দেশ্য ছিল এ আইনের আওতায় সংঘটিত অপরাধের যথাযথ বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে ভুক্তভোগীদের রক্ষা করা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে এ আইনের বেশিরভাগ সময়ই অপব্যবহার হচ্ছে।-সূত্র-ইত্তেফাক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn