নিউইয়র্ক : নতুন টুইন টাওয়ার তথা ফ্রিডম টাওয়ার এবং এ্যাম্পায়ার এস্টেট ভবনের ওপরে ইসলামের ঝান্ডা উড়ানোর পরিক্রমায় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশী তরুণ আশিকুৃল আলম (২২) কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। টাইমস স্কোয়ারে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ছদ্মবেশী এফবিআই এজেন্টের কাছে থেকে ৯ মিলিমিটারের দুটি পিস্তল ক্রয় করেছিলেন আশিক। সেই পিস্তলসহ ৬ জুন বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর সন্তান এবং নিউইয়র্কের জন জে কলেজ অব ক্রিমিনাল জাস্টিসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিককে গ্রেফতারের সংবাদ প্রবাসীদের মধ্যে নতুন শংকা তৈরী করেছে। ৬ বছর আগে মা-বাবার সাথে অভিবাসন ভিসায় নিউইয়র্কে আসার পর থেকেই জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করছিলেন আশিক। তাকে ৭ জুন শুক্রবার ব্রুকলীনে ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করা হয়। সেখানে আশিকের বিরুদ্ধে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিপ্রায়ে অস্ত্র ক্রয়ের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কের ইউএস এটর্নী রিচার্ড পি ডনোঘু মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত বছর ৯/১১ এর ১৭তম বার্ষিকীর দিনে আশিক ওসামা বিন লাদেনের প্রশংসা করেছেন। লাদেনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন আশিক। যা করা উচিত ছিল, তা করেছেন বিন লাদেন।’ ‘এখন দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের’-মন্তব্য করেছেন আশিক। এমন অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে ছদ্মবেশী গোয়েন্দা কর্মকর্তার কাছে। গত বছরের আগস্ট থেকে ৬ জুন গ্রেফতার হবার আগ পর্যন্ত বেশ কটি বৈঠক হয় ছদ্মবেশী গোয়েন্দাদের সাথে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রথম টার্গেট টাইমস স্কোয়ারও কয়েকবার অবলোকন করা হয়। কীভাবে হামলা  চালালে অনেক মানুষের প্রাণহানী ঘটবে-তা নিয়ে শলাপরামর্শ করেছেন আশিক। শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটন ডিসিতে হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হত্যার আগ্রহের কথাও প্রকাশ করেছেন আশিক। এজন্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিষ্ফোরক ও বন্দুক সংগ্রহের পরিকল্পনার কথাও জানান আশিক। বোমা-গুলি রোধক ভেস্ট এবং গ্রেনেড

ক্রয়ের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন আশিক। আইসিস এবং আল ক্বায়েদার সমর্থক হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপনের সূত্র ধরেই এফবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তার সাথে সখ্যতা গড়ে। আশিক সহজেই তাদের কাছে নিজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীণকার্ডধারী আশিককে জামিনহীন আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন ফেডারেল জজ। তাকে পুনরায় ২১ জুন আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেদিন শুরু হবে মামলার পরবর্তী পরিক্রমা। এ সময় কোর্টে উপস্থিত হয়ে আশিকের মা-বাবা চেষ্টা করেছেন জামিনে মুক্ত করতে। দু’লাখ ডলারের বন্ড দিয়ে হলেও জামিন চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু আশিক হচ্ছেন সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যে মারাত্মক হুমকি, তাই তাকে জামিন দেয়া সম্ভব নয় বলে মাননীয় জজ চেরিল এল পল্যাক উল্লেখ করেছেন। গত ১০ মাসে গোয়েন্দাদের সাথে বৈঠকের সময় আশিক উল্লেখ করেছেন যে, টাইমস স্কোয়ারে আত্মঘাতি হামলা চালাতে চান তিনি। এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে হত্যা এবং এআর-১৫ রাইফেল দিয়ে পুলিশ অফিসারদেরকেও হত্যা করতে চান। এমনকি নতুন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তথা ফ্রিডম টাওয়ার ধ্বংসের জন্যে রকেট ল্যান্সার নিক্ষেপ করার পরিকল্পনাও তার রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ছদ্মবেশী গোয়েন্দাদের কাছে। মামলায় এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এামলায় এখনও আশিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি বলে ইউএস এটর্নী জানান। বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের ৭ তলাবিশিষ্ট এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে পঞ্চম তলায় বসবাসরত আশিকের মা-বাবা কঠোর পরিশ্রমী এবং তারা ব্যবসা করেন ম্যানহাটানে। আশিক সেই এপার্টমেন্টের কারো সাথে কখনো কথা বলেনি। আশিকের ফেসবুকেও আইসিস কর্মকান্ডের ছবি এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত বই ও ফিল্ম রয়েছে। অর্থাৎ আশিক ধর্মের নামে সন্ত্রাসে লিপ্তদের অনুসারি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনে ব্যস্ত ছিলেন। ধর্মের নামে সন্ত্রাসে লিপ্ত হবার অভিপ্রায়ে আশিক গ্রেফতারের ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা ক্ষুব্ধ, বিচলিত এবং হতভম্ব। কেউই তাকে প্রবাসীদের অংশ হিসেব মনে করছেন না। ‘আশিক হচ্ছেন মানবতা আর সভ্যতার শত্রু। তাই তাকে বাংলাদেশী পরিচয়ে পরিচিত করার অবকাশ থাকতে পারে না’-এমন মন্তব্য সাধারণ প্রবাসীদের। ছবি: ফেইসবুক থেকে

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn