বার্তা ডেক্সঃঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজসহ নতুন পাঁচটি আধুনিক জাহাজ কমিশনিং করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় আরো একধাপ এগিয়ে গেল। দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এই কমিশনিংয়ের ফলে বাংলাদেশের জলসীমা সুরক্ষায় এবং নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করলো নতুন দু’টি আধুনিক ফ্রিগেট বানৌজা ওমর ফারুক, আবু উবাইদা ও একটি করভেট যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাশা এবং দু’টি জরিপ জাহাজ বানৌজা দর্শক ও তল্লাশি। প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজগুলোকে নৌবাহিনীতে কমিশনিং করেন। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ পিএমও এবং গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চট্টগ্রামে বানৌজা ঈসা খান নৌ জেটিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাহাজসমূহের অধিনায়কগণের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল গার্ড অব অনারও প্রদান করেন। আইএসপিআর জানিয়েছে, সদ্য সংযোজিত হওয়া নৌবাহিনীর দু’টি ফ্রিগেট ‘ওমর ফারুক’ ও ‘আবু উবাইদাহ’র দৈর্ঘ্য প্রতিটির ১১২ মিটার ও প্রস্থ ১২ দশমিক ৪ মিটার এবং করভেট যুদ্ধজাহাজ বানৌজা প্রত্যাশার দৈর্ঘ্য ৯০ মিটার ও প্রস্থ ১১ দশমিক ১৪ মিটার। যুদ্ধজাহাজগুলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম এবং এতে শত্রু বিমান, জাহাজ এবং স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক থ্রি-ডি রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, রাডার জ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রসীমা অর্জন কেবল নয় এই সমুদ্র সম্পদটা যেন দেশের উন্নয়নে ব্যয় হয় সেজন্য আমাদের কাজ করতে হবে এবং সেজন্য আমরা সুনীল অর্থনীতি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছি। বিশাল এই সমুদ্রের সম্পদ আহরণ এবং তাকে কাজে লাগানোই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আর জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সমুদ্রসীমাকে রক্ষার জন্য নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করে আমরা গড়ে তুলছি। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে, যা প্রশংসার দাবিদার। দেশের পররাষ্ট্রনীতি’র আলোকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন- ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’, আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। কিন্তু যদি বাংলাদেশ কখনো বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাকে মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে চাই। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের সুশৃৃঙ্খল সশস্ত্রবাহিনী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিপুলভাবে প্রশংসিত পেশাদার একটি বাহিনী। তিনি বলেন, গত ২০১০ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে আমাদের যুদ্ধজাহাজ সার্বক্ষণিকভাবে অংশগ্রহণ করছে। এই বছরের আগস্ট মাসে আমরা সেখানে পাঠিয়েছি আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি করভেট বানৌজা ‘সংগ্রাম’, যা বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও এ বাহিনী নিয়মিতভাবে বহুজাতীয় এক্সারসাইজ, বঙ্গোপসাগরে ‘কোর্ডিনেটেড প্যাট্রল’ ও কূটনৈতিক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘মেরিটইম সিকিউরিটি’-কে সুসংহত করে চলেছে। তিনি বলেন, মালদ্বীপে যখন সুপেয় পানির অভাব হয়েছিল তখন আমরা আমাদের নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে সুপেয় পানি সেখানে পাঠাই এবং তাদের সহযোগিতা করি। এভাবেই দেশে এবং প্রতিবেশী দেশেও বাংলাদেশ নৌবাহিনী নানারকম সহযোগিতা প্রদান করে যাওয়ায় তিনি এই বাহিনীকে ‘কর্মমুখর’ আখ্যায়িত করে তাদের ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার নৌবাহিনীতে বর্তমান প্রজন্মের উন্নত সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফট, হেলিকপ্টার ও বিশেষায়িত বাহিনী সংযোজন করেছে এবং এর মাধ্যমে ‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলায় আমরা একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত দু’টি ফ্রিগেট ও একটি অত্যাধুনিক করভেট এবং আমাদের নিজস্ব খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি দু’টি আধুনিক জরিপ জাহাজ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীর ক্ষমতাকে আরো জোরদার করবে এটাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। এ ছাড়াও নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বলীয়ান করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত থেকে সংগৃহীত ২টি পেট্রোল ক্রাফট ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। তিনি বলেন, সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালেই জাতির পিতা সমুদ্রসীমা আইন প্রণয়ন করেন, যদিও জাতিসংঘই তা অনেক পরে করেছে। জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এসব ব্যাপারে কোনো চিন্তা বা উদ্যোগ কিছুই গ্রহণ করেনি উল্লেখ করে বলেন, ‘এরই মাঝে ২১টি বছর পার হয়ে যায়। আর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসেই এ ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী শান্তিকালীন বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশবাসীর আস্থা ও প্রশংসা অর্জন করেছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়নেও নৌবাহিনী যথাযথ ভূমিকা রেখেছে, তাছাড়া যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নৌবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং যথাযথভাবে তাদের সাহায্য করেছে। প্রধানমন্ত্রী এজন্য নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn