হাওরে বাঁধ নির্মাণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ কর্মকর্তা। সময়মতো দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও সরকারি কাজে প্রশাসনিক অদক্ষতার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে রবিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তা, ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলার পরদিন গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে ওই সুপারিশ পাঠানো হয়। কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল কর্তৃক স্বাক্ষরিত সুপারিশে ১৩ কর্মকর্তার ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরা হয়। দুদক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চারজন, পাউবোর দু’জন এবং মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট কমিটির সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। সুপারিশে বলা হয়, ওই ১৩ কর্মকর্তা সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ যথাসময়ে শুরু ও শেষ করার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধান, পর্যবেক্ষণ ও
বাস্তবায়নে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্ব পালনে সীমাহীন অবহেলার কারণে বন্যার পানি ঢুকে এবার হাওরে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টি শুরুর আগেই ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার কথা ছিল। বাস্তবে তা করা হয়নি। এতে হাওরের ফসল, মৎস্যসহ অন্যান্য সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। সুপারিশে আরও বলা হয়, রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ অনুযায়ী সিনিয়র সচিব মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান, অধস্তন কার্যালয়গুলোর প্রধান হিসাবদানকারী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে ব্যয় হয় তা নিশ্চিত করবেন। এ ক্ষেত্রে পাউবোর ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ৫৬ দিন পর। একই সঙ্গে পাউবোর আওতাধীন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট কমিটি নিবিড়ভাবে তদারক করেনি। সময়মতো বাঁধ নির্মাণ না করায় দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশে নাম উল্লেখ করা ১৩ কর্মকর্তা হলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ আলী খান, যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-১, হাওর) নুজহাত ইয়াসমিন, যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা অনু বিভাগ) মন্টু কুমার বিশ্বাস, পাউবোর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) একেএম মমতাজ উদ্দিন। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট কমিটির সাতজন হলেন যুগ্ম সচিব কাজী ওবায়দুর রহমান, শামিম আরা খাতুন, মো. খলিলুর রহমান, উপসচিব নন্দিতা সরকার, মুহম্মদ হিরুজ্জামান, সহকারী প্রধান আবু ইউসুফ মোহাম্মদ রাসেল ও মো. সিদ্দিকুর রহমান। রোববার ৬১ জনের বিরুদ্ধ দুদকের করা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত পর্যায়ে ওই ১৩ জনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn