সিলেট :: ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আজ বিদায় নিচ্ছে ২০২০। মহামারি করোনা ভাইরাসে আতঙ্ক  ছড়ানো এই বছরে সিলেটজুড়ে আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগ ও পুলিশ। হত্যা ও গণধর্ষণের ঘটনায় বছরজুড়ে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সিলেট ছাত্রলীগ। এছাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করে রায়হান নামের এক যুবক খুনের ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।  করোনা সংকটে বিশেষ করে লকডাউনের সময় মানবিক সহায়তা নিয়ে সিলেটের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। ঘরবন্দি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা প্রশংসা কুড়িয়েছিল সাধারণ মানুষের। কিন্তু ছাত্রলীগের কয়েকজন ক্যাডার ও পুলিশের কয়েকজন অসৎ সদস্যের কারণে সেই অর্জন ম্লান হয়ে পড়ে। প্রশংসার জায়গা পরিবর্তিত হয় সমালোচনায়।

গেল ৬ ফেব্রুয়ারি সরস্বতি পূজার দিন অভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্বের জের ধরে নগরীর টিলাগড়ে খুন হন কলেজছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী অভিষেক দে দ্বীপ। সহকর্মীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় সে। এই হত্যাকান্ডের পর টিলাগড় এবং পাশর্^বর্তী এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজ এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায় ছাত্রলীগ। হত্যাকান্ডের ঘটনায় সিলেটজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় নিহত দ্বীপের বাবা বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার চার্জশিটে ছাত্রলীগের সমূদ্র রায় সৈকত, সৌরভ দে, পূজন দেব, সাগর দে, সঞ্জয় দে, জুবায়ের হাসান রিমেল, আদনান আহমদ, শাহরিয়ার কবির ভৌমিক ও সজীব দে’কে আসামী করা হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সিলেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ওইদিন রাতে তারা এক দম্পতিকে টিলাগড় থেকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রাবাসের ভেতরে। পরে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই দম্পতির প্রাইভেট কারের ভেতর গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষন করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এ ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ ক্যাডার ধর্ষকদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। বর্বরোচিত এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সিলেটের বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। ধর্ষকদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযানে নামে র‌্যাব ও পুলিশ। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে ছাত্রলীগের ৮ ক্যাডার।

এদিকে, পুরো বছর ভাল কাটলেও শেষের দিকে এসে ‘শনির দশা’ ভর করে সিলেট মহানগর পুলিশের কপালে। গত ১০ অক্টোবর রাতে নগরীর কাস্টঘর এলাকা থেকে টহল পুলিশের একটি দল বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায় রায়হান আহমদ নামের এক যুবককে। রায়হান নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। ফাঁড়িতে আটকে রেখে রায়হানের কাছে টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা না পেয়ে তাকে নির্যাতন করে গুরুতর আহত করা হয়। পরদিন সকালে রায়হানকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সে মারা যায়।

শুরুতে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। কিন্তু পরবর্তীতে তার পরিবার টাকার জন্য নির্যাতনের অভিযোগ তুললে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি দায়িত্বে অবহেলা ও নির্যাতনের প্রমাণ পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করে। পরে পরে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী হত্যা এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দেন এসআই আকবর।

গত ৯ নভেম্বর ভারতে পালানোর সময় কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে ওই মামলায় চার পুলিশ সদস্য কারাবন্দি রয়েছেন। এ ঘটনায় মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়ে সিলেট মহানগর পুলিশ। সমালোচনার মুখে বদলি করা হয় পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn