বাঁ থেকে অভিযুক্ত তুফানের স্ত্রী আশা, নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকি ও তাদের মা রুমি

 বগুড়ায় মেয়েকে ধর্ষণের পর মা ও মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় জড়িত পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকি ও তার মা রুমিকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ৩০ জুলাই রোববার রাতে পাবনা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কাউন্সিলর ও তার মাকে পাবনা থেকে বগুড়ায় নিয়ে আসছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। গ্রেফতার হওয়া কাউন্সিলর রুমকি বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের সদ্য বরখাস্ত হওয়া আহ্বায়ক এবং ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা তুফান সরকারের স্ত্রী আশার বড় বোন এবং মা রুমি তুফানের শ্বাশুড়ি।

এর আগে দুপুর আড়াইটায় তুফান সরকার ও তার দুই সহযোগী রুপম ও আলী আজমকে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শ্যাম সুন্দর রায়ের আদালত। এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ জানান, দুপুরের দিকে তুফান সরকারসহ তিনজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৩০ জুলাই রোববার বেলা ১১টার দিকে মা ও মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে যান বগুড়ার জেলা প্রশাসক নূর-ই আলম সিদ্দীক। এ সময় তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে তাদের চিকিৎসা ও পড়ালেখা খরচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলেও জানান। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে নির্যাতন করে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। ছবি: স্টার মেইল

জেলা প্রশাসক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাদ প্রধানের নেতৃত্বে কমিটিতে আছেন, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহীদুল ইসলাম খান ও জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। এদিকে বিকেল ৪টায় মা-মেয়ের সঙ্গে হওয়া ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শহরের সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারে সচেতন নাগরিক সমাজ, সুজন, প্রশাসনের জন্য নাগরিক ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই বগুড়ায় ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার। ঘটনাটি জানাজানি হলে শুক্রবার দুপুরে তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী এবং তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়।

পরে শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় কাউন্সিলর রুমকির বাড়িতে নিয়ে তাদের মাথা ন্যাড়া করে বেধড়ক পেটানো হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের পর আশা ও তার বোন রুমকি তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় হুমকি দিয়ে বলেন, ‘২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছেড়ে যাবি। অন্যথায় তোদের আরও খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে’।

রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই কিশোরী এবং তার মাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় নারী নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগে দুটি মামলা করেছেন। এতে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে তুফান ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn