মিনহাজ উদ্দিন-

সদ্য ঘোষিত সরকারি বাজেটে আমদানি করা লাইমস্টোন ও আস্ত বোল্ডার পাথরের উপর অতিরিক্ত ২৫% সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বিপাকে  পড়েছেন পাথর আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চুনা পাথর, আস্ত পাথর আমদানিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে এ খাতে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান আর পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না বলে জানান তারা। শুক্রবার তামাবিল স্থলবন্দর সরজমিন পরিদর্শনকালে ফুটে ওঠে এর প্রভাব ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ ভোগান্তির চিত্র। তামাবিল স্থলবন্দরের একাধিক চুনা পাথর, আস্ত পাথর আমদানিকারক এ প্রতিনিধিকে জানান, মূলধন ছাড়া এমনিতে ভারতের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুনা পাথর, বোল্ডার ব্যবসা চালিয়ে নিতে বাড়তি লাখ লাখ টাকার পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। আগের আরোপিত ট্যাক্স, ভ্যাট পরিশোধ করে নানাবিদ সীমাবদ্ধতায় ব্যবসায়ীরা কোনো রকমে দিন কাটানোর অবস্থায় ছিলেন। তাছাড়া সূত্র মতে আমদানিকৃত বিভিন্ন প্রকারের ভাঙা পাথরে আগেকার সম্পূরক আমদানি শুল্ক ছিল ৯১% তা বর্তমানে করা হয়েছে ৬৯% পার্সেন্ট। সদ্য সমাপ্ত বাজেটে আমদানিকৃত লাইমস্টোনে ২৫% বাড়তি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি ও বোল্ডারও অনুরূপ বাড়তি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আস্ত পাথর আমদানিকারকদের আমদানিকৃত চুনা পাথর ও আস্ত বোল্ডার টনপ্রতি ২৯০ টাকার স্থলে ৬১০ টাকা করা হয়েছে। অপর দিকে আমদানিকৃত ভাঙা পাথরের সম্পূরক শুল্ক কমানোর ফলে সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, ধোপগুল, বিছনাকান্দি, শ্রীপুর, লোভাছড়া, চাদনীঘাট, কাঁচপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা স্টোনক্রাশিং মিলগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রমের পাশাপাশি এ খাতে বিনিয়োগকারী কয়েক সহস্রাধিক ব্যবসায়ী এবং অন্তত ৭-৮ লাখ পাথর শ্রমিক সম্পূর্ণ বেকার হয়ে যাবেন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় এর প্রভাব পড়বে ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি, শ্রীপুর, লোভাছড়াসহ সবকটি পাথর কোয়ারিতেও এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে। কোনো রকম পর্যালোচনা, সমীক্ষা যাচাই-বাছাই না করেই হঠাৎ করেই আমদানি করা চুনা পাথর, আস্ত বোল্ডার পাথরের উপর আরোপিত বাড়তি সম্পূরক শুল্কবৃদ্ধির  এ ঘটনার প্রতিকারে তামাবিল চুনা পাথর,পাথর ও কয়লা আমদানি কারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দসহ সিলেটের চেম্বার কর্তৃপক্ষ সরকারের এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রীসহ কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তামাবিলের কাস্টমস প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম জানান, সদ্য ঘোষিত বাজেটে চুনা পাথরে ২৫% ও বোল্ডারস্টোনেও অনুররূপ বাড়তি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেখানে আগে চুনা পাথরে নেয়া হতো ৩১%, বোল্ডারস্টোনে ৪১% সম্পূরক শুল্ক। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে চুনাপাথরে ৬২% ও বোল্ডারস্টোনে ৫০% আরোপ করা হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স কে, বি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. বুলবুল আহমদ জানান, এমনিতেই আমরা আমদানিকারকরা নানা টানাপড়েনে আছি। তার ওপর ২৯০ টাকার স্থলে টন প্রতি অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক ৬১০ টাকা করা হয়েছে যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা বলা চলে। এ বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপের কারণে আমি নিজেও বাড়তি প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তামাবিলের রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, সরকারের নতুন আরোপিত সম্পূরক শুল্ক যথা নিয়মে আদায় হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা পালনে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বধ্যপরিকর। ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক যথা নিয়মে আদায় হচ্ছে। এ সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির কোনো সুযোগ নেই।  এ ব্যাপারে কথা হলে তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি এম লিয়াকত আলী জানান, আমদানিকৃত ভাঙা পাথরের সম্পূরক চার্জ কমানো হয়েছে এবং চুনা পাথরসহ বোল্ডারস্টোনে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে আমরা চুনা পাথর, আস্ত বোল্ডারস্টোন আমদানিকারকসহ সবকটি স্থানের স্টোন ক্রাশারমিল ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। এ কারণে সিলেটের পাথর কোয়ারিসমূহে পাথর উত্তোলনে আরও জটিলতা, বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এছাড়াও কম সম্পূরক শুল্কে ভাঙা পাথর আমদানি করার উপক্রম হওয়ায় সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের স্টোন ক্রাশারে কর্মরত ৭-৮ খেটে খাওয়া পাথর শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন। ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে বিষয়টি সরকারের নজরে আনা উচিত। বিষয়টি আমাদের সমিতি ও সিলেট চেম্বারের মাধ্যমে সরকারের অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা আশা করছি বিষয়টির একটি ইতিবাচক সমাধান হতে পারে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn