ঢাকা: সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী দেশগুলো এমন সময় কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলো যখন ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে দেশটিতে ব্যাপক নির্মাণ কাজ চলছে। আর সে নির্মাণকাজে অংশ নিচ্ছে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলেও, কাতারেও রয়েছে বহু বাংলাদশি। এখন সৌদি আরবের সাথে কাতারের সম্পর্ক নষ্ট হলে কতটা সমস্যায় পড়বে সেদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি? এমন প্রশ্নের জবাবে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, “আমরা মনে করি ব্যাপারটা সাময়িক। শ্রমিকরা যারা ওখানে আছে তাদের ওপর প্রভাব ফেলবেনা। আর নতুন করে যারা যাবেন তাদের ওপর পড়বে কিনা সেটা সময় গেলে বোঝা যাবে। সৌদি বিনিয়োগকারীদের যারা কাতারে বিনিয়োগ করেছে সে বিষয়ে একটা প্রভাব আসতে পারে”। তবে সব মিলিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের এই ছোট দেশ কাতারের ২৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান এখন চতুর্থ। আরও অনেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন কাতারে যাওয়ার জন্য। তারপরেও বিআইডিএস’র গবেষক নাজনীন আহমেদও মনে করেন এখনই শ্রমবাজারের ওপর সরাসরি কোন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে তিনি মনে করেন পুরো মধ্যপ্রাচ্য নিয়েও এখন আরও সতর্ক প্রস্তুতি নেয়া উচিত বাংলাদেশের।

তিনি বলেন, “যেটা মধ্যপ্রাচ্যে হলো সেটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেহেতু এটা বাংলাদেশের শ্রমবাজার তাই খেয়াল রাখতে হবে যে এমন হয় কিনা যে কাতারে শ্রমিক পাঠালে অন্যরা সমস্যা করতে পারে। কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে অন্য দেশের সাথেও যেনো সমস্যা না হয়। এগুলো দেখেই বাংলাদেশকে কৌশল ঠিক করতে হবে”।

তবে এটি শুধু শ্রমবাজারের বিষয় নয়, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির মনে করেন কাতারকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এই সংকট দীর্ঘতর হলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্কে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসি’র সদস্যরাই জড়িত। এদের সবার সাথেই বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক আছে। “তারা সবাই মুসলিম উম্মাহর সদস্য। ওআইসির সদস্য। এই কাঠামোতে কোন বিভাজন দেখা দিলে আর আমাদের কোন পক্ষ নিতে বলা হলে সেটা একটা সমস্যা হতে পারে”। আর কাতারে কর্মরত ছিলেন এমন একজন সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক বলছেন, যতক্ষণ কাতার নিজে পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবে ততক্ষণ বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই। তবে যদি সংকট দীর্ঘতর হয় তাহলে প্রকৃত অর্থেই সংকটে পড়বে মধ্যপ্রাচ্যের এই আমদানি নির্ভর দেশটি। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য আমদানি আর বিমান পরিবহন নিয়ে সংকট চলতে থাকলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশটির অর্থনীতিতে, যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের শ্রমবাজারটিও।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn