রফিকুল ইসলাম কামাল :: দেশের কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে হওয়া অর্থমন্ত্রীরা টানা ২৮ বছর জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করে গেছেন সংসদে। এ এক বিরল রেকর্ডই ছিল বটে! ২৮ বছর ধরে বাজেট উপস্থাপনের এই পথচলায় বিরামচিহ্ন পড়েছে অবশেষে। এই দীর্ঘ সময় পর এবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন না কোনোও সিলেটি। এবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি কুমিল্লার বাসিন্দা। এবারই প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট উপস্থাপন করলেন কামাল। সিলেট অঞ্চল থেকে সরকারের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে স্থান পাওয়ায় সাইফুর রহমান, আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও শাহ এএসএম কিবরিয়া মিলে দেশের ৩০টি বাজেট উপস্থাপন করেন। তন্মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট উপস্থাপনকারী হিসেবে রেকর্ডের অধিকারী সাইফুর ও মুহিত। তবে টানা ১০টি বাজেট উপস্থাপনের রেকর্ড শুধুই মুহিতের। কিবরিয়া টানা ৬টি এবং সাইফুর টানা ৫টি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ দেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন। সবমিলিয়ে দেশে ৪৮টি বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে। জাতীয় বাজেটে সিলেটিদের উপস্থাপনার শুরু হয় আশির দশকে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান গণভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮০-৮১ অর্থবছর এবং ১৯৮১-৮২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন সাইফুর রহমান। এরপর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৯৯১-৯২ অর্থবছর থেকে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর পর্যন্ত ৫টি বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন সাইফুর। এক মেয়াদ পর ২০০১ সালে বিএনপি ফের ক্ষমতায় আসে। তখন ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে ২০০৬-০৭ অর্থবছর পর্যন্ত আরো ৫টি বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন তিনি। সাইফুর রহমান নিজের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকার। আর তাঁর শেষ বাজেটের আকার ছিল ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে এরশাদ সরকারের আমলে দুটি বাজেট উপস্থাপন করেন। দীর্ঘ সময় পর, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুহিত। এরপর ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও সরকার গঠন করে মহাজোট। এ দুই মেয়াদেই সিলেট-১ আসনের সাংসদ মুহিত সরকারের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১০টি বাজেট উপস্থাপন করে টানা বাজেটের রেকর্ড গড়েন তিনি। মুহিতের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ৭ জুন তিনি নিজের শেষ বাজেট উপস্থাপন করেন। এ বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার এক লাখ কোটি টাকা ছড়ায় মুহিতের হাত ধরে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে। সেবার মুহিতের উপস্থাপিত বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
এদিকে, শাহ এএসএম কিবরিয়া প্রথমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেন ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ৬টি বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। কিবরিয়ার উপস্থাপিত প্রথম বাজেটের আকার ছিল ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা ছিল তাঁর শেষ বাজেটের আকার। প্রসঙ্গত, সাইফুর রহমান ছিলেন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও শাহ এএসএম কিবরিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এঁদের মধ্যে সাইফুর রহমান ও কিবরিয়া প্রয়াত হয়েছেন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn