বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া বিচার বিভাগের রায়ের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে দেশে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা চলছে। এই প্রবণতা সত্যিই দুঃখজনক। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন একথা বলেন। প্রায় ৪০ টি জেলা থেকে আসা শতাধিক মাঠ নেতা এই সভায় অংশ নেন। বর্তমান বাস্তবতায় দলের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতেই মূলত বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রে তিনটি বিভাগ থাকে। একটি আইন সভা, একটি নির্বাহী বিভাগ, আরেকটি বিচার বিভাগ। আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের মাঝে রেফারির ভূমিকা পালন করে বিচার বিভাগ। রেফারি না থাকলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত কে রোধ করবে? সংবিধানেই বিচার বিভাগকে সেই ক্ষমতা দেয়া আছে।’

জানা গেছে, বৈঠকে জোট করে ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়। এসময় মাঠ নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি- এই দুই দলকেই লাল কার্ড দেখিয়ে এদের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীলদের নিয়ে নয়া জোট গঠন করতে হবে। ফলাফল যাই হোক তা মেনে নিয়ে এই জোট ভোটে যাবে। বর্ধিত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সংসদে যেভাবে কথা বলা হয়েছে তা দুঃখজনক। এনিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্যরা নিজে থেকেই প্রমাণ করেছেন যে তারা কতোটা অযোগ্য। যদিও বর্তমান সংসদের বেশিরভাগ সদস্যই বিনাভোটের। এই ভুয়া জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এর বেশি আশা করাও যায় না।’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি। এই সংবিধান ছুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা তার মেয়েরও নেই। যারা এখন এই সংবিধান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমাদের চাইতেও বেশি মায়াকান্না দেখাচ্ছেন তাদের অবস্থা ‘মায়ের চাইতে মাসির দরদ বেশি’র মতোন। এরা না জেনে না পড়ে সমালোচনা করছেন। আর আমাদের পাগল বলছেন। আমার না হয় বয়স আশি বছর। এ কারণে না হয় পাগলই হলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে আরো নয় জন অ্যামিকাস কিউরি (বিশিষ্ট আইনজীবী) এ বিষয়ে আদালতে শুনানিতে অংশ নিয়ে মতামত দিয়েছেন। সাতজন বিচারক ঐকমত্যের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন- তাহলে কি তারা সবাই পাগল?’

ড. কামাল হোসেন এ ইস্যুতে যারা সমালোচনা করছেন তাদের আরো পড়াশুনা করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘দয়া করে একটু পড়ুন। জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে আমাদের সহায়তা নিন। চাইলে আমরা কাগজপত্র পাঠিয়ে দেব। পড়ার পর সমালোচনা করুন। বাহাত্তর সালে আমি কী বলেছি, আর এখন কী বলেছি, মিলিয়ে নিন। তখনকার বাস্তবতা আর এখনকার বাস্তবতা এক নয়- আমি সেটাই বলেছি। অন্যরাও একই কথা বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আসলে তারা পড়বেনই বা কখন? তারাতো অনেক ব্যস্ত, পড়ার সময় নেই। তারা ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে।’   সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খালেকুজ্জামান, জানে আলম, আওম শফিকউল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। জেলার নেতাদের মধ্যে ছিলেন- চাঁদপুরের সভাপতি সেলিম আকবর, রংপুরের সভাপতি ডা. খলিলুর রহমান, সিলেটের সভাপতি নিলেন্দু দেব, মেলভীবাজারের সভাপতি শান্তিপদ ঘোষ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn