বিতর্কিত দুই মহিলা আ.লীগের নেত্রীর বহিষ্কার দাবি
১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ। এদের অনেককেই চেনেন না সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কমিটিতে বিতর্কিত, অপরিচিত ও হাইব্রিডদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আছে ত্যাগী নেত্রীদের ঠাঁই না হওয়ার। বিশেষ সুপারিশে অপরিচিত অনেকে কমিটিতে জায়গা পাওয়ার কথাও বলছেন। গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে মহিলা আওয়ামী লীগ। কমিটিতে সভাপতি, সহ-সভাপতি ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৮ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৮ জন, অন্য সম্পাদক ২৩ জন এবং কার্যকরী সদস্য ৮৯ জন।
কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন জান্নাত আরা হেনরী। বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, সে সময় তিনি কোটি কোটি টাকা অবৈধ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে ছিলেন। তবে সে যাত্রায় রক্ষা পান। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকে বাদ দিয়ে ১১ মামলার চার্জশিট অনুমোদনের ফলে পরিচালকদের সঙ্গে তিনিও রেহাই পান।
স্কুলশিক্ষক থেকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য। এখন তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের গর্বিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এমন বিতর্কিত নেত্রীকে কমিটিতে ঠাঁই না-ও দিতে পারতো বলে মন্তব্য করেন কয়েকজন নেত্রী। নাম প্রকাশ না করে বলেন, হেনরী অনেক পাওয়ারফুল মহিলা। তবে দলের জন্য তার চেয়ে নিবেদিত কর্মী অনেক আছে।
নতুন কমিটিতে কার্যকরী সদস্য পদ পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মজলিশে শূরা সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়া নদভী। রিজিয়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক। জামাতের সহযোগী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার নেত্রী ছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযমের শিষ্য হিসেবে পরিচিত আবু রেজা নদভীর স্ত্রী রিজিয়া। স্থানীয় মহিলা লীগের নেত্রীদের অভিযোগ, নদভী ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে সংসদ সদস্য হন। এ নিয়ে দলের মধ্যে এখনো ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। রিজিয়ার বাবা মমিনুল হক চৌধুরী সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে ১৯৯১ সালে এবং পরে বাঁশখালী আসন থেকে জামায়াতের পক্ষে নির্বাচন করেন।
মহিলা লীগ সভাপতি সাফিয়া খাতুন বলেন, রিজিয়া কী করে, সেটিই দেখার বিষয়। আমরা রিজিয়ার সাংগঠনিক কর্মদক্ষতা দেখে পদ দিয়েছি। কারো বাবা জামায়াত করলে সে আওয়ামী লীগ করলে দোষ কোথায়? হেনরী বিষয়ে বলেন, সে তো আর দোষী সাব্যস্ত হয়নি। তাই পদ পেয়েছে।
জানা যায়, ১৫১ সদস্যে কমিটির অনেকেই নতুন। ছাত্রলীগ করা। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করা ছাত্রলীগ নেত্রীরা স্থান পেয়েছে। এদের অনেককেই চেনেন না সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক বলেন, কমিটির সবাই আমার পরিচিত। অনেকে আগের কমিটি থেকে এসেছে। ত্যাগীদেরই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ করা যেসব মেয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে তাদের অনেকে অপরিচিত। তবে তারা দলের জন্য নিবেদিত।
এদিকে কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে সাবেক কয়েকজন নেত্রীর। তারা বলেন, আমরা মহানগর কমিটিতে ছিলাম। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেবে বলে মহানগরে পদ নিইনি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা না হওয়ায় এখন আম-ছালা দুই-ই গেল। তারা বলেন, এবারের কমিটিতে যাদের স্থান দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেই হাইব্রিড। এরা বসন্তের কোকিল। অনেককেই আমরা এর আগে সংগঠনে দেখিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা দুই নেত্রী সম্পর্কে পূর্বপশ্চিমকে বলেন, কমিটিতে এবার বিশেষ সুপারিশে অনেককে স্থান দেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আনারকলি পুতুল পরিচিত নন। তাকে সভাপতি-সম্পাদকও ভালোভাবে চেনেন বলে মনে হয় না। তাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশে স্থান দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১২ জন নেত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি সাফিয়া খাতুন বলেন, এদের আমি চিনি না। তবে এরা ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মী ছিল। এদিকে, আওয়ামী লীগের একটি অংশ এই দুই বির্তকিত নেত্রীকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বহিষ্কার করার জন্য আবেদন করেছে। দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদককে এ বিষয়টি আগামীকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানানো হবে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।