বার্তা ডেস্ক :: বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস শুধু লাখ লাখ মানুষের প্রাণই কেড়ে নিচ্ছে না, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাত পর্যন্ত নাস্তানাবুদ করে ফেলছে। বিশেষ করে এয়ারলাইন্স ব্যবসা তথা অ্যাভিয়েশন খাতকে একেবারে খাদের কিনারে ছুড়ে ফেলেছে এ মহামারী। এমতাবস্থায় দেশের এয়ারলাইন্সগুলোও কঠিন সময় পার করছে। জানা গেছে, করোনা প্রকোপের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথমে ১০ ভাগ বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্থাটির বর্তমান জনবল ৫ হাজার ১৯৭। এ বিপুল কর্মী বাহিনীর বেতন পরিশোধই একমাত্র খরচ নয়। এর বাইরে রয়েছে লিজে আনা উড়োজাহাজের ব্যয়, ঋণের কিস্তি, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। সব মিলে মাসে গুনতে হচ্ছে ন্যূনতম ৬২৮ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও লোকসান আছে। করোনার কারণে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া বাবদ গুনতে হচ্ছে ২৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ রকম নানা কারণে খরচ সামলাতে না পেরে দেড় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা চায় সরকারের কাছে। এর জবাবেই পাওয়া গেছে সোনালী ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, কেবল জনবলের বেতন নয়, উড়োজাহাজ কেনার ফিক্সড লোন, লিজের খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং টিকিট ফেরত বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে।

বিমানের বহরে থাকা ১৮টি বিমান রক্ষণাবেক্ষণেই প্রতিমাসে ব্যয় করতে হচ্ছে ২৬৬ কোটি টাকা। বসিয়ে রাখার জন্য উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আরও বাড়ছে। এ ছাড়া লিজ ও ঋণের জন্য মোট ১৭০ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে প্রতি মাসে। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত লোকসান ৫শ কোটি টাকার বেশি। জানুয়ারিতে ২৮ শতাংশ ক্যাপাসিটি লস, ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ শতাংশ, মার্চে ৭৮ শতাংশ। এপ্রিলে ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ। এখন বিমানের খরচ চালানোর জন্য মাসে দরকার ৬২৮ কোটি টাকা। বেসরকারি বিমান সংস্থার মধ্যে ইউএস-বাংলার বহরে আছে সবচেয়ে বেশি ১৩টি উড়োজাহাজ। আর নভো এয়ারে সাতটি এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজে আছে ছয়টি। বেসরকারি খাতে ইউএস-বাংলা সব অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি সাতটি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করে। টিকিট বিক্রির আয় না থাকলেও ব্যাংকের কিস্তি, উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন কর, সিভিল অ্যাভিয়েশনের নানা চার্জ, বিদেশে সাতটি কার্যালয় পরিচালনার খরচ, পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারসহ কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলোকে।

গত এপ্রিল পর্যন্ত ইউএস বাংলার ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির শিকার। তাই তারা কিছু সুবিধা চাইছে সরকারের কাছে। বলছে সিঙ্গাপুর, ভারত, চীনের আদলে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দরকার। অ্যাভিয়েশন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশের অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতন, এয়ারপোর্ট চার্জ গুনতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেবিচকের চার্জ দিতে হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে আগামী তিন বছরের জন্য সব বিমান ও হেলিকপ্টারের যাবতীয় নেভিগেশন, ল্যান্ডিং ও পার্কিং চার্জ মওকুফ করা; প্রণোদনাস্বরূপ অ্যাভিয়েশন শিল্পকে আগামী ১০ বছরের জন্য বিবিধ আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান; যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে ‘আগাম কর’ অব্যাহতি, বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে লেট ফি অন্যান্য দেশের মতো বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ হারে ধার্য করার দাবি জানাচ্ছি। আন্তর্জাতিক বাজারে জেট ফুয়েলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড় চাইছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে সিঙ্গাপুর বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য ৫০ শতাংশ চার্জ মওকুফ করেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্ট স্পেস ভাড়াও মওকুফ করে দিয়েছে। ভারত বিমান সংস্থাগুলোকে বাঁচাতে ১১ হাজার ৯০০ কোটি রুপির প্যাকেজ করছে। চীন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এয়ারলাইন্সগুলোকে অর্থ সহায়তা, অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের চার্জ থেকে অব্যাহতি, অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থাগুলোর জন্য জেট ফুয়েলের দাম হ্রাস করেছে। আর অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের ‘রেসকিউ প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌজন্যে : এভিয়েশননিউজবিডি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn