কাজী সোহাগ:: স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে অর্থাৎ বিদ্রোহী হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূল থেকে দলের এই ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে- দল থেকে চিঠি দিয়ে বহিষ্কার করা হলেও স্থানীয় পর্যায়ে তা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। বহিষ্কারের পরও তারা দলের বিভিন্ন মিটিং ও কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এতে প্রত্যক্ষ গ্রুপিং তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক জেলার নেতারা দলের প্রধান কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য- দল থেকে বহিষ্কারের পর কোনো কোনো নেতা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।

নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের কোনো কোনো নেতার আস্কারা পেয়ে তাদের এই অবস্থা বলে জানান তৃণমূলের নেতারা। এদিকে দল থেকে বহিষ্কৃতরা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন দলীয় কার্যালয়ে। দৌড়ঝাঁপ করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা ও অফিসে। বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতেই তাদের এই ছোটাছুটি। স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছিল দলটি। কিন্তু আওয়ামী লীগ-তৃণমূলের রাজনীতি চাঙ্গা করতে পারেনি বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে বিভেদ-বিরোধ ও কলহ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি নানা অভিযোগ ও ক্ষোভ বেড়েছে তৃণমূলের। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে বিরাজমান স্থবিরতা কাটিয়ে তোলার যে পরিকল্পনা ছিল তার চেয়ে কলহ বেশি সৃষ্টি হয়েছে।

তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল যাকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করে, ভোট দিয়ে সমর্থন জানিয়েছে কেন্দ্র থেকে বাছাইয়ে সেই প্রার্থীকে বাদ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, কেন্দ্র থেকে যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ তাকে প্রত্যাখ্যান করছে। এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আওয়ামী লীগে চরম অসন্তোষ কাজ করছে। তৃণমূলের বেশ কয়েক নেতা বলেন, প্রার্থী বাছাই করার ক্ষমতা তৃণমূল আওয়ামী লীগের কাছে দেয়া হলেও আসলে সব হয় কেন্দ্র থেকে। তারা বলেন, গতবার বেশিরভাগ স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ যাকে সমর্থন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে চূড়ান্ত না করে তাদের নিজের লোককেই কেন্দ্রের সমর্থন দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন চলছে। এই নির্বাচন ঘিরে কিছুটা কোন্দল ও গ্রুপিং দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে প্রতিনিয়ত নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে। তাই নির্বাচন ঘিরে এসব কোন্দল খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে দল থেকে বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যারা বহিষ্কার হচ্ছেন তারা চেষ্টা করছেন আবারো দলে অন্তর্ভুক্ত হতে। এখন দল সিদ্ধান্ত নেবে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না। তবে বিদ্রোহী হলে কাউকে ছাড় দেয়ার ইচ্ছা নেই দলের। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বিদ্রোহী হলে ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। দলের প্রতি তাদের আনুগত্য ও অতীত ভূমিকা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ ধরনের সংখ্যা কতো তা তারা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, বহিষ্কৃতরা সাধারণত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে তাদের সুপারিশ আদায় করছেন। দলটির তৃণমূল থেকে এ ধরনের উদ্যোগকে ক্ষতিকর বলে জানানো হয়েছে। এদিকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছাড় দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাদের দাবি, আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। অর্থাৎ দলের নেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেকটা উন্মুক্তই রাখা হচ্ছে। এসব সার্বিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে। তবে দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে

জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী কোনো সভায়ও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে সুপারিশ পাঠাতে ইতিমধ্যে তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। এতে আওয়ামী লীগের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য সংগঠনের সব জেলা-মহানগর শাখাকে তৃণমূলের রেজ্যুলেশন পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা প্রদান করেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন আগামী ১১ই এপ্রিল প্রথম ধাপে ২০টি জেলার ৬৩টি উপজেলার ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একইভাবে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ধাপে সারা দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট গঠনতান্ত্রিক বিধি মোতাবেক তৃণমূলের রেজ্যুলেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn