সিলেটের খাদিম এলাকায় সম্পত্তির লোভে লন্ডন প্রবাসী শাশুড়িসহ ৫ জনকে ভাত ও তরকারির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করে পুত্রবধূ সাহেদা। এ ব্যাপারে ওই প্রবাসীর নাতি আতাউর রহমান শাহপরাণ (রহ.) থানায় মামলা করেন। এই মামলা দায়েরের পর সাহেদা তার ভাই নাসির উদ্দিন, চাচা আহাদ, তার সহযোগী আব্দুর রহমান ও তালুকদার মকবুলকে নিয়ে আতাউরকে প্রকাশ্যে হত্যা ও মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে সোমবার এসএমপি পুলিশ কমিশনারের কাছেও লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন তিনি। ২০১১ সালের ২৪শে অক্টোবর যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহিনুর রহমান বিয়ে করেন সুনামগঞ্জ ছাতক থানার সমসপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর মেয়ে সাহেদা  বেগমকে। বিয়ের কায়েক মাস পর যুক্তরাজ্যে বসবাসরত মা ও স্বজনের কাছে চলেন যান শাহিন। এ সময় শাহপরাণ (র.) থানার আল মদিনা আবাসিক এলাকায় তাদের বাসায় রেখে যান সাহেদা বেগম ও তাদের পরিবারে লোকদের। শাহিন যুক্তরাজ্য চলে যাবার পর তাদের সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য উঠে পড়ে চক্রান্ত শুরু করেন সাহেদা। এর জন্য সে তার ভাই সৈয়দ নাসির উদ্দিন, চাচা আব্দুল আহাদ, চাচার সহযোগী আব্দুর রহমানকে নিয়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য ফন্দি আঁটেন। এরই সূত্র ধরে কয়েকবার সাহেদা তার ভাইদের দিয়ে সোনামালা ও তাদের পরিবারকে হুমকি সহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান। যার জন্য শাশুড়ি সোনামালা বেগম শাহপরাণ (রহ.) থানায় চলতি বছরের ২৩শে মার্চ ও ১৬ই জুলাই অভিযোগ দাখিল করেন। এদিকে, ১২ই সেপ্টেম্বর রাতে সাহেদা ভাত ও তরকারির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করে শাশুড়িসহ অন্যদের। বিষাক্ত খাবার খেয়ে আক্রান্তদের সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সে সময় সাহেদা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। আর অন্যরা ৩ দিন চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে যান। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্য প্রবাসীর স্ত্রী সাহেদার ভাই সৈয়দ নাসির উদ্দিন ও চাচা আব্দুল আহাদ এর প্ররোচনায় স্বামীর সহায় সম্পত্তি নিজ নামে লিখে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা ছিল বহু দিনের। এ নিয়ে অনেকবার শালিস বৈঠকও হয়। ঘটনার দিনের ২ মাস আগে সাহেদার শাশুড়ি যুক্তরাজ্যে থেকে দেশে আসেন বেড়ানোর জন্য। কিন্তু ১২ই সেপ্টেম্বর শাশুড়িকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করা হয়। এসময় বাসায় ছিলেন সোনামালার
নাতি আতাউর রহমান, আতাউরের বোন মিসবাহ বেগম (১৭) ভাই আজিজুর রহমান (১৩), বোন সাইদা বেগম (১১) ও ভাগনি মহিমা বেগম (০৯)। তারা সবাই রাতের খাবার খান। এ সময় আতাউর রহমান বাসার বাইরে ছিলেন। তিনি বাসায় ফিরেন রাত ১১টায়। ঘরে এসে দেখেন দরজা খোলা। নানি, ভাই, বোন, ভাগনি সবাই অজ্ঞান ও অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। তখন সাহেদা সুস্থ ছিলেন ও আতাউরকে দেখে অসুস্থতার ভান করেন। আতাউরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে সবাইকে অজ্ঞান ও অচেতন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান। এ নিয়ে আতাউর রহমান এসএমপি’র শাহপরাণ (রহ.) থানায় মামলা করেন। এ মামলায় সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার সমসপুর গ্রামের সৈয়দ নাসির উদ্দিন, আহাদ মিয়া, জালালাবাদ থানার পাঠানটুলার আব্দুর রহমান ও সাহেদা বেগমকে আসামী করা হয়। এ ব্যাপারে শাহপরাণ (রহ.) থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন জানান, আল মদিনা আবাসিক এলাকায় যুক্তরাজ্য বৃদ্ধা মহিলা সহ ৫ জনকে খাদ্যে বিষ জাতীয় বস্তু মিশিয়ে হত্যার অভিযোগে ৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। এজাহারনামীয়দের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ পুরো ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn