বার্তা ডেক্সঃঃপড়াশোনা শেষে আর বিসিএসের প্রস্ততি নেওয়া হলো না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে সদ্য স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করা উলফাতারা তিন্নীর। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) গভীর রাতে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিন্নী ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তিন্নীর স্বজনদের অভিযোগ, রাতে বড় বোনের সাবেক স্বামী শেখপাড়া গ্রামের কুনুরুদ্দীনের ছেলে ও তার তিন সহযোগী জোরপূর্বক তিন্নীদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এসময় তিন্নীর শোবার ঘরে ঢুকে তার শ্লীলতাহানী করায় সঙ্গে সঙ্গে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে।

তিন্নীর বড় বোন মিন্নী জানান, কয়েক বছর আগে তার সঙ্গে বিয়ে হয় একই গ্রামের কুনুরুদ্দীনের ছেলে জামিরুলের। কিন্ত স্বামীর পরিবারে বনিবনা না হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে জামিরুল তাদের দুই বোনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। কিছুদিন আগে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বিষয়টা অবহিত করেন। কিন্ত কোন ফল আসেনি। বৃহস্পতিবার তিন্নী তার এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া যায়। রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরে আসে সে। বাড়িতে সে ও তার ছোট বোন ও মা বসবাস করেন। প্রথমে রাত ১০টার দিকে সাবেক স্বামী জামিরুল ও তার তিন সহযোগী বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর রাত ১১টার দিকে জামিরুল সহযোগীসহ আবারো তাদের বাড়িতে আসে। তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় জামিরুল। সহযোগীদের বাইরে রেখে জোর করে তিন্নীর শোবার ঘরে প্রবেশ করে সে। এসময় তিন্নীর কান্না শুনে বাড়ির নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠার চেষ্টার করেন মিন্নী। কিন্তু জামিরুলের সহযোগীদের বাধায় নিচে নেমে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর জামিরুল চলে গেলে রাত ১২টার দিকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেয় তার বোন। বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় তিন্নীকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মিন্নীর অভিযোগ, জামিরুল তার বোনের শ্লীলতাহানি করায় সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তিন্নীর খালাতো ভাই প্রতিবেশী মখলেচুর রহমান বলেন, খালাতো বোন মিন্নীর বিয়ে হয় একই গ্রামের জামিরুলের সঙ্গে। কয়েক বছর পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু জামিরুল মিন্নীকে আবারো ফিরিয়ে নিতে চান। না পেরে প্রায়ই জামিরুল মিন্নীদের হুমকি দিতে থাকেন। মিন্নীর বাবা মারা যাবার পর এর মাত্রা বেড়ে যায়। মখলেচুর বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মোবাইলে জানতে পারেন জামিরুল তিন্নীদের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর ও তিন্নীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে তিন্নী অপমান সইতে না পেরে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ছিল। শৈলকুপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বলেন, তিন্নীর মৃত্যুটি রহস্যেঘেরা। পরিবারের অভিযোগ তিন্নীর বড় বোনের সাবেক স্বামী বাড়িতে প্রবেশ করে তান্ডবের পর তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে প্রতিবেশীরা। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছেন। ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn