বার্তা ডেস্ক :: ভগ্নিপতি পাওনা টাকা চাওয়ায় ও থাপ্পড় মারায় ভাগ্নে-ভাগ্নিকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ খাটের নিচে রেখে দেয় বাদল। এ ঘটনায় বাদল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মামা বাদল মিয়া (৩৬)। পুলিশ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসেনের আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বাদল। এর আগে বুধবার ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। ওই দিনই বাঞ্ছারামপুর থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়। বাঞ্ছারামপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের কামাল উদ্দিনের বসত করা দালানের দুটি কক্ষের খাটের নিচ থেকে সোমবার রাতে তার দুই সন্তান শিপা আক্তার (১৪) ও মেহেদী হাসান কামরুলের (১০) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিপা বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে এবং কামরুল সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল মামা বাদল মিয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুমিল্লার হোমনা উপজেলার খোদে দাউদপুর গ্রামের মৃত আবদুর রবের ছেলে বাদল বাঞ্ছারামপুরের সাহেবনগরে বোনের বাড়িতে ছিল গত কিছু দিন থেকে। মার্চ মাসে বাহরাইন থেকে দেশে আসে সে। করোনা মহামারীর কারণে আর বিদেশ যেতে পারেনি। এর মধ্যে নিজের এলাকায় গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে সে বাঞ্ছারামপুর বোনের বাড়িতে চলে আসে। বাহরাইন থাকাকালে ৩ বছর আগে দোকান করার জন্য বাদল ভগ্নিপতি কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেয়। এ থেকে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়। বাকি ১০ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ায় বোনজামাইয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল তার। সপ্তাহখানেক আগে বাদলকে এজন্য থাপ্পড়ও মারেন কামাল। এই ক্ষোভে ভাগ্নেকে হত্যা করে সে। ভাগ্নের লাশ দেখে ফেলায় ভাগ্নিকেও খুন করে বাদল। তাদের দুজনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়।

হত্যার বর্ণনায় বাদল পুলিশকে জানায়, সোমবার দুপুরে ভগ্নিপতির বাড়িতে তার থাকার কক্ষে উচ্চস্বরে গান শুনছিল সে। ওই সময় ভাগ্নে মেহেদী হাসান কামরুল তার মায়ের কাছ থেকে মজা খাওয়ার কথা বলে ৫০ টাকা নিয়ে তার রুমে আসে। এরপরই সে তার হাত-পা বেঁধে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পরে লাশ খাটের নিচে রেখে দেয়। ভাগ্নি শিপা ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে তা দেখে ফেললে তাকেও মারতে উদ্যত হয় সে। জোরাজুরির এক পর্যায়ে শিপাকে ধাক্কা মেরে বাথরুমে ফেলে গলা কেটে হত্যা করে। পরে তার লাশও খাটের নিচে রেখে দেয়। মাগরিবের আজান হওয়ার পরও কামরুল ঘরে না ফেরায় সবাই তার খোঁজে বের হন। তাকে খুঁজতে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় শিপাকে ঘরে রেখে যান তার মা হাসিনা আক্তার। পরে আবার ঘরে এসে দেখেন শিপাও নেই। নিখোঁজ দুজনের খোঁজ পেতে এলাকায় মাইকিং করা হয়। রাত সাড়ে ৮টায় থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান তাদের বাবা-মাসহ স্বজনরা। কামাল উদ্দিন তার শ্যালক বাদল মিয়াকে নিয়ে বাঞ্ছারামপুর ফেরিঘাট এলাকায় তাদের খোঁজে যান। পরে বাদল মিয়া কাউকে কিছু না বলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। বাঞ্ছারামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত করছেন।
সৌজন্যে : যুগান্তর

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn