তারিকুল ইসলাম- ভেঙে যাচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্ট। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে না পেরে জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), এনডিপি, জাতীয় জনতা পার্টিসহ কয়েকটি দল। শিগগিরই এসব দল আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেবে। তবে এ দলগুলো অন্য কোনো জোটে যাবে কিনা, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যুক্তফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপিকে ১৫০ আসন এবং জামায়াতকে ত্যাগ করার শর্ত দিলে সে প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। পরে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য গড়ে জোটটি। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী ও তার দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। সে সময়ই বিকল্পধারার আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে মনঃক্ষুণ্ন হন শরিক দলের নেতারা। কারণ আসন সমঝোতায় শরিক দলের নেতাদের ছাড় দেয়নি বিকল্পধারা। এছাড়াও নির্বাচনের পর থেকে কোনো কর্মকাণ্ডে না থাকা, শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখাসহ নানা ইস্যুতে জোটে অস্থিরতা তৈরি হয়। যে কারণে জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কয়েকটি দল।

জানতে চেয়ে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, জোট এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয় বলা যেতে পারে। আমরা মাঝে মধ্যে কিছু প্রোগ্রাম করে থাকি। তবে যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাচ্ছে সেটা বলা যাবে না। কারণ এখনও জোট ভেঙে যায়নি। যুক্তফ্রন্টে থাকা ১১টি দল হল- বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বিএলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি, জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি, গণসাংস্কৃতিক দল, বাংলাদেশ জনতা লীগ, বাংলাদেশ শরিয়া আন্দোলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ মাইনোরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট। দলগুলোর মধ্যে বিকল্পধারা, ন্যাপ ও গণফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। যুক্তফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নেতারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তফ্রন্টের উদ্যোগে একমাত্র ‘বাজেট ২০১৯-২০২০, বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সব দল অংশ নেয়। এরপর থেকে যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রম নেই। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি. চৌধুরীর নামে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যদিও এসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আগে জোটের শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয় না। আসলে জোট নিয়ে শরিকদের এখন কোনো আগ্রহ নেই। যুক্তফ্রন্টের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, আমরা যুক্তফ্রন্টে আর নেই। চলতি অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভার পর থেকে জোটের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমরা প্রধান শরিক বিকল্পধারাকে ‘রাজনীতি’ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা তা করছে না। এজন্য জোটের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেইনি। আরেক শরিক দল বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন আল আজাদ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জোটের যে তৎপরতা ছিল তা নির্বাচনের পরে স্তিমিত হয়ে গেছে। জোটের এখন কোনো কর্মকাণ্ডই নেই। যুক্তফ্রন্টে আছি কি নাই, তা বলার সময় এখনও হয়নি।

আরেক শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, যেদিন সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বিকল্পধারা শুধু নিজেদের জন্য দুটি আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেছে, যুক্তফ্রন্ট সেদিনই শেষ হয়ে গেছে। এরপর একটা মিটিং হয়েছিল। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি দেয়ার দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু বি. চৌধুরী একমত হননি। তারপর থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের কোনো যোগাযোগ নেই। জোটের শরিক দলের নেতারা আরও জানান, ১১টি দল ও কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলেও লাভবান হয়েছে একমাত্র বিকল্পধারা। জোটের অন্য দলগুলোর কথা চিন্তা না করে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে। তারা দুটি আসন পেয়েছে। ক্ষমতাসীন দলও শুধু মাহী বি. চৌধুরী ও মেজর (অব.) মান্নানের দুটি আসনে ছাড় দিয়েছে। অন্য কোনো দলের নেতাদের ছাড় দেয়নি। তখনই এ জোট শেষ হয়ে গেছে। তারপরও কেউ কেউ নির্বাচন পরবর্তী সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু তা না পেয়ে সবাই হতাশ। তাই অনেকে জোট ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn