বাংলাদেশি কিশোরী পায়েল যখন ভারত যাচ্ছিল তাকে বলা হয়েছিল তাকে নৃত্য প্রশিক্ষকের কাজ দেওয়া হবে। ভারতে জীবন পাল্টে দেওয়ার স্বপ্নে আগ-পিছ না ভেবে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছায়। এক্ষেত্রে সে জেলেদের নৌকা ব্যবহার করেছিল। মানে তার দালালরা তাকে মাছ ধরার জাল দিয়ে ঢেকে ভারতে পাচার করে।

কিন্তু ভারতে পৌঁছার পর তাকে মহারাষ্ট্রের একটি পতিতালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মহারাষ্ট্রের পুনের সেই পতিতালয়ে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। নিজ জন্মভূমি থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে সেই পতিতালয়ে তাকে একটি কক্ষে আটক করে ‘মারধর, অপমান-অপদস্থ করা হচ্ছিল’ আর তাকে জোর করে অসংখ্য পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়।

পায়েলকে উদ্ধার করা হয়েছিল ‘নয় মাস এগারো দিন আগে’। উদ্ধার করে পুনের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। সেখানে সে কখনো ভাবেনি তাকে উদ্ধার করতে কেউ আসবে। বাংলাদেশের কনস্যুলেট অফিসের নজর এত দূরে গিয়ে পড়বে এবং কেউ আন্তরিক হয়ে কাজটি করে দেবে সেটা কল্পনা করা তার জন্য কঠিনই ছিল।

তবে তখন নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনস্যুলার সেকশনের প্রধান মোশারফ হোসেন সে সময়টাতে সহস্রাধিক আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে কাজ করছিলেন। পায়েলের মতো অসংখ্য তরুণী ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে মানবেতর অবস্থায় আছে। অনেক ছেলেও তাদের মতো ভাগ্য বরণ করেছে। বাংলাদেশি দূতাবাসের ধীরগতির কারণেও তাদের ফেরা প্রলম্বিত হয়।

থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেন দূতাবাস কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। তিনি ২০১৫ এর মার্চে নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দেওয়ার পর থেকে ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সচেষ্ট হন।

তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে ভারতের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন। পুনের অলাভজনক সেই আশ্রয়কেন্দ্রটিতেও গিয়েছিলেন যেখানে পায়েলকে উদ্ধার করেন। গত দুই সপ্তাহ আগে পায়েলের সাথে আলাপে তার কাহিনী জানতে পারেন মোশারফ। পায়েল তার বাড়ি ও পরিবারের ঠিকানা দেন তাকে। সব তথ্য মিলিয়ে দেখে পায়েলের ব্যাপারে নিশ্চিত হন।

অবশেষে পায়েলের দেশে ফেরা হচ্ছে। মায়ের সাথে যখন প্রথম কথা বলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন: ‘আমার মাকে যখন জানিয়েছি আমি ফিরছি সে তখন কাঁদছিল। গত কয়েক মাস আগে আমি খুব খারাপ অবস্থাতে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে আমি ভালো আছি।’ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে এ কথা জানান পায়েল। পায়েল তার ঘরে ফেরার আনন্দ নিয়ে বলেন ‘আমি খুব খুশি যে আমি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে যাচ্ছি, পতিতালয় থেকে নয়।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn