মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক,বিশেষ প্রতিনিধি: ভালুকার কাশর গ্রামের একটি বাসায় রোববার বিকেলে বোমা বিষ্ফোরনে নিহত আলম প্রামানিক ওরফে আব্দুল্লাহ ড্রাইভার ওরফে আরিফ (৪০) পুলিশের তালিকা ভুক্ত পলাতক জেএমবি সদস্য ও পলাতক আসামী। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম তাঁকে আটকের জন্য বেশ কয়েকবার অভিযান চালায়। সর্বশেষ কুষ্টিয়ায় তাঁকে আটকের জন্য অভিযান চালায় পুলিশ। টের পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আতœগোপনে চলে যায়। সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাঁটা মাহফুজের হাত ধরে সে উগ্রপন্থী সংগঠনে প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

টানা ২২ঘন্টা অভিযান শেষে সোমবার নিহত জেএমবি সদস্য আলম প্রামানিক ওরফে আব্দুল্যাহ ড্রাইভারের খন্ড বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে ময়মনসিংহে নিয়ে যায়। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ১টি শক্তিশালী হাত গ্রেনেড,৬টি বোমা ও বোমা তৈরীর বিপুল পরিমান সরঞ্জাম। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে নিহতের স্ত্রী ও বাড়ীর মালিকসহ ৭জনকে। পুলিশ সুত্র জানায়, কিছুদিন আগে কুষ্টিয়ায় কাউন্টার টেররিজম তাকে আটকের জন্য অভিযান শুরু করলে সে টের পেয়ে যায় এবং সেখান থেকে পালিয়ে ভালুকায় চলে আসে। ভালুকা উপজেলার অজ্ঞাত স্থানে এক মাস আত্মগোপনে থেকে গত ৪/৫ দিন পূর্বে সে উপজেলার কাশর গ্রামে আজিম উদ্দিনের বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস শুরু করে।

রোববার বিকেলে বোমা বিস্ফোরণে তার মৃত্যু ঘটে। পুলিশ ধারনা করছে বোমা তৈরীর সময় সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে।এ ঘটনার পর থেকে পুলিশ বাড়িটির চারপাশ ঘিরে রাখে। সোমবার সকালে ঢাকা থেকে আসা বোমা নিস্ক্রিয় টিমের প্রধান মোঃ রহমত উল্যাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। এ সময় র‌্যাব,পুলিশ,পিবিআই,সিআইডি,ভালুকা ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা অভিযানে অংশ নেয়। অভিযানকালে ঘর থেকে একটি হাত গ্রেনেড,৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারসহ আত্মঘাতী আক্রমনের পোষাক,কয়েক হাজার ফিল্টার,পেট্রল,হাজার হাজার লোহার টুকরা, বিপুল পরিমাণ তার, টিএপি পাউডারসহ বোমা তৈরীর বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। বিশেষজ্ঞ টিম গ্রেনেড ও বোমাগুলো নিস্কীয় করার পর অভিযান সমাপ্ত ঘোষনা করে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

এ ঘটনায় নিহত জেএমবি সদস্যের স্ত্রী পারভীন(৩০), শিশু ছেলে ইব্রাহিম(৭) ও ইসরাইল (৩) এবং বাড়ির মালিক মোঃ আজিম উদ্দিন(৬০), স্ত্রী ফাতেমা (৫৫),দু’ছেলে হাসান (২০) ও আশিককে (১৬)কে আটক করা হয়। আটককৃতদের পুলিশ হেফাজতে ময়মনসিংহ ডিআইজি অফিসে রাখা হয়েছে বলে ভালুকা মডেল থানার ওসি মামুন অর রশিদ গনমাধ্যমকে জানান। এ দিকে ঘটনার পর রোববার রাতে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি,ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান,পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম,র‌্যাব-১৪’র অধিনায়ক ল্যাফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম ও এসএ নেওয়াজী, ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোশারফ হোসেন খান সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন গভীর রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন।

ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম উপস্থিত গনমাধ্যম কর্মীদের জানান, বিষ্ফোরনে নিহত আলম প্রামানিক উরফে আব্দুল্লাহ উগ্রপন্থীদলের সক্রিয় সদস্য এবং বোমা তৈরীর বিশেষজ্ঞ ছিল। কিছুদিন আগে তাকে কুষ্টিয়ায় কাউন্টার টেররিজম সদস্যরা আটকের জন্য অভিযান চালিয়েছে। টের পেয়ে সে কুষ্টিয়া থেকে পরিবারসহ কেটে পরে। এরপর থেকে সে ভালুকা উপজেলার অজ্ঞাত বিভিন্ন স্থানে একমাস আত্মগোপনে থেকে গত ৪/৫দিন পুর্বে কুষ্টিয়ায় বাড়ী পরিচয়ে ভালুকার কাশর গ্রামে আজিম উদ্দিনের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। পুলিশ সুপার বলেন, ঈদে বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো তার পরিকল্পনায় থাকতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের স্ত্রীর ভাষ্যে সে ধরনের ইঙ্গিত মিলেছে।

কুষ্টিয়ার বাসিন্দা পরিচয়ে বাড়ী ভাড়া নিলেও জেএমবি সদস্য আব্দুল্লাহ ওরফে আলম প্রমানিকের বাড়ী নাটোর জেলার সদর উপজেলার আমহাতি উত্তরপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম আবুল কালাম ওরফে আবুল কাশেম প্রামানিক। গত ২২আগষ্ট উপজেলার শিল্পাঞ্চল এলাকা হবিরবাড়ী ইউনিয়নের কাশর গ্রামে আজিম উদ্দিনের বাসায় ভাড়া নিয়ে স্বপরিবারে বসবাস শুরু করে। বাসার মালিক আজিম উদ্দিনের বাড়ী পাশ^বর্তী গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার বিরই গ্রামে। বিষ্ফোরনের পর নিহতের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে বের হয়ে যায়। বিকট শব্দে বোমা বিষ্ফোরিত হওয়ায় স্থানীয়রা টের পেয়ে পুলিশকে জানায়।

এ সময় ঘটনাটি স্থানীয় মসজিদ গুলোর মাইকে ঘোষনা দেয়ার ব্যাবস্থা নেয়া হলে এলাকাবাসী নিহতের স্ত্রীকে স্থানীয় আইডিয়ালের মোড় থেকে সন্দেহ জনক ভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর পুলিশকে খবর দিলে সেখান থেকে পুলিশ নিহতের স্ত্রী-সন্তানকে আটক করে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। রোববার রাত থেকে এটি ’ভালুকার টক অব দি টাউন’এ পরিনত হয়। অপর দিকে আতংকিত হয়ে পড়ে হবিরবাড়ী এলাকার লোকজন। টানা ২২ঘন্টা চলার পর সোমবার বেলা পৌনে ৩টায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn