খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ–গত বুধবার সকালে একটি ভয়েস মেসেজ আসে ছবিরুন নেছার মুঠোফোনে। এটিই ছিল নাজিমের (২১) শেষ বার্তা। এতে এক কথায় নাজিম উদ্দিন বলছিলেন, ‘আম্মা আমি গেইমও উঠছি, আমার লাগি দোয়া কইরো।’ আর কোনো যোগাযোগ নেই।  এরপর সোমবার ইতালি থেকে নাজিমের এক আত্মীয় দেশে ফোন করে জানান, তিউনিসিয়ায় সাগরে নৌকা ডুবে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মারা গেছেন, ওই নৌকায় নাজিমও ছিলেন। এরপর থেকে মা ছবিরুন নেছার বিলাপ আর থামছে না। নাজিম উদ্দিনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লা গ্রামে। বাবার নাম আজির উদ্দিন, মা ছবিরুন নেছা। একই নৌকায় থাকা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের মাহবুবুল করিমও (২৬) মারা গেছেন। তাঁর বাবার নাম আবদুস সুবুর, মা রেনুয়ারা বেগম। নাজিম উদ্দিনের চাচা শাহীন আহমদ জানান, নাজিম উদ্দিন সিলেটের মদন মোহন কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে নাজিম উদ্দিন ছিলেন সবার বড়। সিলেট নগরের লেকসিটি আবাসিক এলাকায় নিজেদের তিনতলা বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।

গত বছর ছাতকের উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা শামীম আহমদ নাজিমকে ইতালি পাঠানোর কথা বলেন। এরপর থেকে নাজিম পরিবারের কাছে বায়না ধরেন ইতালি যাবেন। তাঁর মা-বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে ছেলের পীড়াপিড়িতে রাজি হন। শামীমের সঙ্গে সাত লাখ টাকায় চুক্তি হয়। কথা ছিল প্রথমে অর্ধেক এবং ‘গেমে’ ওঠার পর বাকি টাকা দেওয়া হবে। এরপর গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রামের আরও দুই তরুণ শরিফ, শহীদসহ নাজিম বাড়ি থেকে ঢাকায় যান। পরে ঢাকা থেকে লিবিয়া। নাজিমের সঙ্গে লিবিয়া যাওয়া শরিফ গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই বাড়িতে ফিরে আসেন। শরিফের বরাত দিয়ে নাজিমের চাচা শাহীন আহমদ জানান, সেখানে বাংলাদেশিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। কোনো কথা বললেই চলে শারীরিক নির্যাতন। নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া মাহবুবুল করিমের ভাই রেজাউল করিম জানান, মাহবুব ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। সাত ভাই, দুই বোনের মধ্যে মাহবুব ছিলেন চতুর্থ। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তিনি দেশে এসে আর ভারতে যাননি। পরে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার এক দালালের মাধ্যমের ইতালি যাওয়ার জন্য রওনা হন। মাহবুবও গত বছরের মে মাসে বাড়ি ছাড়েন। লিবিয়া যাওয়ার পর মাঝেমধ্যে পরিবারের সঙ্গে কথা হতো। কিন্তু ছয় মাস ধরে যোগাযোগ ছিল কম।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn