ওয়েছ খছরু-ফেসবুকে প্রেম হয় শিপা ও মাহির। সম্পর্কে তারা খালাতো ভাই-বোন নয়। একে অপরকে চিনতেনও না। ফেসবুকে প্রেমের পর ম্যাসেঞ্জারে হতো কথাবার্তা। একপর্যায়ে প্রেম। সেই প্রেমের সূত্র ধরে আইনজীবী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছে। সিলেটে আইনজীবী স্বামী আনোয়ার হোসেনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে থাকা শিপা বেগম জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে আইনজীবী আনোয়ার হোসেনকে হত্যার ব্যাপারে এখনো মুখ খুলেনি।

নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ জানায়- সিলেট জেলা বারের পরিচিত আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যার ঘটনায় গত সোমবার স্ত্রী শিপা বেগমকে রিমান্ডে আনা হয়। তাকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পুলিশ জানায়- আইনজীবী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী শিপা বেগমের সঙ্গে ঘটনার প্রায় তিন মাস আগে উপশহরের বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী মাহির ফেসবুকে পরিচয় এরপর প্রেম হয়। আর এই প্রেমের সূত্র ধরে তারা পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সকালে স্বামী এডভোকেট আনোয়ার হোসেন কর্মস্থল সিলেট জেলা বারে চলে যেতেন। আর এ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে প্রেমিক মাহি এসে হাজির হতো শিপার তালতলাস্থ বাসার সামনে। শিপা বাসা থেকে বেরিয়ে মাহির সঙ্গে মোটরসাইকেলে চলে যেতো। ফিরতো বিকালে। বিষয়টি ধরা পড়েছিলো আনোয়ার হোসেনের কাছেও। এ কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। আনোয়ার হোসেন ও শিপা দু’জন একই বাসায় আলাদা আলাদা ঘরে বসবাস করতেন।

তবে- জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার হোসেনকে হত্যার ব্যাপারে এখনো মুখ খুলেনি বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইউনূস জানিয়েছেন- শিপার কাছ থেকে কিছু তথ্য মিলেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই করা হচ্ছে। শিপার অনেক বক্তব্য নিহত আনোয়ার হোসেনের ভাই মামলার বাদী মনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে। তিনি জানান- আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর শিপা ও মাহি বিয়ে করেছে। এটি শিপাও স্বীকার করেছে। এই বিয়ের বৈধতার কাগজও আছে। মামলার প্রধান আসামি মাহিকে খুঁজছে পুলিশ। মাহি গ্রেপ্তার হলে পুরো ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হবে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

সিলেট শহরতলীর শিবেরবাজারের দিঘীরপাড় গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে নগরীর তালতলাস্থ ৩ নং বাসায় বসবাস করতেন। বাসাটি আনোয়ার হোসেনের নিজস্ব। গত ৩০শে এপ্রিল বিকালে স্ত্রীর মাধ্যমে স্বজনরা জানতে পারেন ডায়াবেটিস নীল হয়ে আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন। এরপর আনোয়ার হোসেনের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। এদিকে- আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় স্ত্রী শিপা বেগম ঘরে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে থাকার পরও শাহজাহান চৌধুরী মাহি নামের পূর্ব পরিচিত যুবককে বিয়ে করেন। আর বিয়ের বিষয়টি আনোয়ার হোসেনের স্বজনের কাছে পৌঁছলে তারা সত্যতা জানতে শিপাকে ফোন দিলে শিপাও বিষয়টি স্বীকার করেন। এতে সন্দেহ হয় পরিবারের। আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে গত ১লা জুন সিলেটের আদালতে মামলা করেন তার ছোট ভাই মনোয়ার হোসেন। ৪৩ মিনিটের একটি অডিও আদালতে দাখিল করেছেন মামলার বাদী মনোয়ার হোসেন।

পরে আদালতের নির্দেশে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলাটি আমলে নিয়ে তালতলাস্থ বাসা থেকে শিপা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে গত সোমবার শিপাকে জিম্মায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে- শিপা গ্রেপ্তারের পর থেকে তার ফেসবুক আইডি ডি-অ্যাকটিভ করে রেখেছে। তবে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় মাহির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিংয়ে রেখেছে পুলিশ। কিন্তু মাহিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে খুব দ্রুত মাহি গ্রেপ্তার হবে বলে আশাবাদ পুলিশের। এদিকে- আইনজীবী আনোয়ার হোসেনের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছে আদালতে। মাহি ও শিপার কললিস্টের জন্যও পুলিশ আবেদন করে। তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন- এই মামলাটি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn