বার্তা ডেস্ক :: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত বলে জানিয়েছে র্যাব। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত ছকেই সংঘটিত হয়েছে। সেই মোতাবেক এই মামলার চার্জশিটও দেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। র্যাবের সূত্রমতে, এই হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে। রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। ওই সময় আদালত মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ইয়াবা বাণিজ্যের সাথে ওসি প্রদীপের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সিনহা রাশেদ হত্যা মামলার চার্জশিট নিয়ে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ইউটিউবের কাজের জন্য টেকনাফ যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। সেখানে গিয়ে ওসি প্রদীপের অপরাধ সাম্রাজ্য জেনে ফেলেন তিনি। ওসি প্রদীপের ইয়াবা বাণিজ্য নিয়ে মেজর সিনহা ইন্টারভিউ নিতে চাইলে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। তিনি আরও বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনা করেন ওসি প্রদীপ। পরে লিয়াকতসহ বাকি আসামিদের নিয়ে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। পরে এ ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা করেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। গত ৫ আগস্ট আদালতে করা এই মামলায় তিনি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের নয় সদস্যকে আসামি করেন।
পরে চারটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। একপর্যায়ে র্যাব এ ঘটনায় প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের ১১ জন পুলিশ সদস্য ও ৩ জন গ্রামবাসী। পুলিশের করা তিনটি মামলার তদন্তে উত্থাপিত অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে র্যাব। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আদালতে তিন মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় বলে মামলা তদন্তকারী সংস্থা র্যাব জানিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে পুলিশের ভিন্ন কৌশল
পাশাপাশি ওইদিন (৩১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের দিকে আসার পথে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করে ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী। ওই সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে পুলিশ। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান। এদিকে সিনহা হত্যার ঘটনায় টেকনাফ ও রামু থানায় পৃথকভাবে মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। তিনটি মামলার দুটি মাদক রাখার অভিযোগে এবং একটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে।
র্যাব যেসব তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে
চার্জশিট জমা দেওয়ার পর সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা হত্যার ঘটনায় মাদক ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা তিনটি মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি। যে কারণে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পুলিশের করা তিনটি মামলার তদন্তে উত্থাপিত অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দিয়েছেন র্যাব। পাশাপাশি সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা মামলাটি তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন। একজন আসামি টেকনাফ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাগর দে পলাতক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ জুলাই ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাভেলস শো ডকুমেন্টারির শুটিংয়ের জন্য তিনজন সহযোগীসহ কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্টে ওঠেন মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই খবর পৌঁছায় টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমারের কাছে। তখন থেকেই ওসি প্রদীপ অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘ভিডিও পার্টিকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে যেকোনো মূল্যে।’ এরপর থেকেই সিনহাকে নজরদারিতে রাখেন পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত এমন তথ্যও তদন্তে ওঠে এসেছে। যে কারণে ৩১ জুলাই সকাল থেকেই তার গতিবিধি লক্ষ্য রাখা হয়। ফলে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ বৃক্ষরোপণ’ অনুষ্ঠান শেষে ওসি প্রদীপকে জানানো হয়, মেজর সিনহা রাশেদ প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফের শামলাপুর পাহাড়ে গেছেন। এ সময় সোর্সের মাধ্যমে বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সিনহার প্রতি নজর রাখতে থাকেন।-যুগান্তর
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৫০ বার