প্রবল বর্ষণে ভূমি ধসে আঘাত হেনেছে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়িতে। হয়েছে শতাধিক প্রাণহানি। শোকার্ত মানুষের বুকে কমেনি স্বজন হারানোর আহাজারি। ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় দুই হাজারেরও অধিক মানুষ। সময়মত পাচ্ছে না পানি, খাবার-দাবার, এক কাপড়ে দিন কাটাচ্ছে অনেকেই। এটাই হলো অরণ্য সুন্দরীর বুকে বেঁচে থাকা বাড়িছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত, শোকাহত দের জীবনযাপন। দুর্যোগে আক্রান্ত কয়েক এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি আর প্রাণ হলেও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে পুরো জেলাতেই দেখা দিয়েছে সঙ্কট। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে জ্বালানি তেল কিনছেন অনেকেই। আবার অনেক পাম্পের সামনে সাদা কাগজের উপর লেখা রয়েছে এখানে ডিজেল নেই। ৮৯ টাকার অকটেন আজ পৌঁচেছে ১৫০ টাকায়, তাও তিন লিটারের বেশি কিনতে পারছে না কেউ। কেউ কেউ এমন দুর্ভোগ পোহাতে না পেরে বন্ধ করে দিয়েছে সিএনজি।

মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রাম নগরীর সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার ফলে রাঙামাটির নিত্যপণ্য, জ্বালানি আর সবজির বাজারে জ্বলছে আগুন। সবজিতে যেমনি হাত দেবার সুযোগ নেই, তেমনি তেল নিয়েও চলে কাড়াকাড়ি, মারামারির মত অবস্থা। বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি তেলের দোকানও। মুদি দোকানে আজ বেড়েছে সকল নিত্যপণ্যের দাম। যেমনি বেড়েছে মুদি পণ্যের দাম, তেমনি সবজিরও। ১৫ টাকার আলু আজ ৪৫, ৫০ টাকার চাল ৭৫,৬০ টাকার আদা আজ ৮০ টাকা। টমেটোর দাম বেড়ে হয়ে গেছে ১০০। কাকরোল আর পটল ৯০তে ঠেকা দিয়েছে। মরিচে আজ আসলেই আগুন, ৬০ টাকার মরিছ আজ তিনগুন বেড়ে ২০০ টাকা। কুমড়োর কেজি ৫০, বেগুনের কেজি ১০০, শসার দাম ৫০ টাকা। বেড়েছে ডিম, মুরগি ও মাংসের দাম। দাম বাড়লেও আমাদের খেয়ে বাঁচতে হবে, তবে সাময়িকভাবে কষ্ট হচ্ছে বলে জানান এক সিএনজি চালক। তিনি জানান, এরকম পরিস্থিতিতে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তেল নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে আমাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানি বলেন, এ সময়কে কেন্দ্র করে কিছু ব্যবসায়ী ব্যবসার নামে জুলুম করে চলছে। আমরা চেষ্টা করছি যত কম দামে পারি মানুষের কাছে বিক্রি করতে। কারণ এই সময় দুর্যোগ পরবর্তী সময়। অধিক মুনাফা আদায়ের না। সবজি বিক্রেতা সোনা মিয়া জানান, পণ্য আমদামি না থাকায় বিক্রি করার মত পর্যাপ্ত সবজি বাজারে নেই। যা অল্প কিছু বিক্রি করছি, তাও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের কিছুই করার নেই।কেনাতো বেশি তাই বাধ্য হয়ে বেশ দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তেল ব্যবসায়ী মেসার্স মিন্টু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল সাত্তার মিন্টু জানান, তাঁদের স্টকে থাকা তেল শেষ। চট্টগ্রাম থেকে তেল আনার সব সড়কপথ বন্ধ। বিশেষ ব্যবস্থায় কাপ্তাই হয়ে নৌপথে তেল আনতে যে খরচ পড়বে তা বহন করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। তিনি বলেন, তেলের জন্য মানুষের যে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে তা সত্যিই বেদনাদায়ক। এখন শুধু প্রশাসনের সহযোগিতা পেলেই আমরা তেল আনতে পারব, এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ায় নিত্যপণ্য ও সবজি ব্যাপকভাবে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নৌপথে কিছু পন্য আসছে কাপ্তাই থেকে। তবে নিত্যপণ্য ও সবজির বাজার ঠিক রাখতে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। শনিবার থেকেই মাইকিং করে শহরবাসীকে জানানো হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দূরে থাকতে। তিনি আরও জানান, শহরের রিজার্ভ বাজার-বনরুপা-তবলছড়িতে অসাধু ব্যবসায়ী নামে অভিযোগ দেওয়ার অভিযোগ বক্স দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার সকাল থেকে টানা বর্ষণে পাহাড় ধসের কারণে রাঙামাটি জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে শহরের একমাত্র অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ মাধ্যম সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ও ব্যাক্তিগত মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। তবে কাপ্তাই-রাঙামাটি রুটে প্রতিদিন তিনটি লঞ্চ যাওয়া আসা করছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn