বার্তা ডেস্ক :: বগুড়া শহরে রিকশায় ফেলে যাওয়া প্রায় ২০ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ সার ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদকে ফেরত দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রিকশাচালক লাল মিয়া। শুক্রবার শহরের সাতমাথায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে টাকাগুলো বুঝে নেন ওই ব্যবসায়ী। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সার ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবঘার দ্বীননাথ প্রসাদের ছেলে। একই এলাকায় তার প্রসাদ অ্যান্ড সন্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সন্তানের লেখাপড়ার স্বার্থে তিনি বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার ভাড়া বাসায় থাকেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাবার জন্য শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে তিনি বাসা থেকে লাল মিয়ার (৫৫) রিকশায় ওঠেন। তার কাছে একটি ব্যাগে প্রায় ২০ লাখ টাকা ও অন্য দুটিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। তিনি রিকশা থেকে শহরের সাতমাথায় নেমে সেখানে বাসে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর টের পান তার টাকার ব্যাগ রিকশায় ফেলে এসেছেন। তিনি বাস থেকে নেমে টাকা খোয়ানোর বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। ওসি এসএম বদিউজ্জামান এ ব্যাপারে এসআই জহুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। পুলিশ কর্মকর্তা শহরে গোগাইল রোড এলাকার একটি দোকানের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এরপর অন্য চালক ও ব্যবসায়ীকে দিয়ে রিকশাচালক লাল মিয়াকে সনাক্ত করেন এবং তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
এদিকে রিকশাচালক শহরের মালগ্রাম মধ্যপাড়ার মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে লাল মিয়া সিটে থাকা ব্যাগ দেখে তা খোলেন এবং ভেতরে টাকা দেখতে পান। তখন তিনি রিকশা চালিয়ে ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদকে খোঁজাখুঁজি করেন। তাকে না পেয়ে তিনি শহরের মালগ্রাম এলাকার ভাড়া বাসায় গিয়ে টাকার ব্যাগ রাখেন। এরপর শহরের খান্দার এলাকায় এসে টাকা হারানোর মাইকিংয়ের জন্য অপেক্ষা করেন। এক পর্যায়ে সদর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম খান্দার গেলে রিকশাচালক লাল মিয়াকে দেখতে পান। তখন লাল মিয়া ব্যাগ ও টাকার বর্ণনা শোনার পর সেটি তার বাড়িতে থাকার কথা জানান। পুলিশ বাড়িতে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ রিকশাচালক লাল মিয়াকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখানে থাকা ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ রিকশাচালক লাল মিয়াকে সনাক্ত করেন। তখন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা টাকাগুলো ব্যবসায়ীকে দেন। ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ জানান, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিনি লাল মিয়াকে একটি নতুন রিকশা কিনে দেবেন। তিনি সদর থানার ওসিকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আগামী রোববার পুলিশের মাধ্যমে লাল মিয়াকে একটি রিকশা ও একটি মোবাইল ফোন উপহার দেয়া হবে।

রিকশাচালক লাল মিয়া জানান, তিনি গরীব হলেও পরের অর্থ-সম্পদের প্রতি লোভ নেই। ভাড়া রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট দুই ছেলে তার সঙ্গে থাকেন। রিকশায় ফেলে যাওয়া টাকাগুলো তিনি মালিককে ফেরত দিতে পেরে দায়মুক্ত হয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী প্রতিদান হিসেবে তাকে নতুন রিকশা কিনে দিতে চাওয়ায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন। এখন তাকে আর পরের ভাড়া রিকশা চালাতে হবে না। সংসারের অভাব দূর হবে। বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, আগামী রোববার লাল মিয়াকে একটি নতুন রিকশা ও একটি মোবাইল ফোন উপহার দেয়া হবে। টাকাগুলো ফেরত দিয়ে রিকশাচালক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সৌজন্যে :: যুগান্তর

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn