বার্তা ডেক্স :: ‘আবারও সুযোগ এলো লন্ডনে যাওয়ার’, ‘এখনই নিশ্চিত করুন ব্রিটের ওয়ার্কপারমিট’, ‘নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে, লন্ডনে যাওয়ার পথ খুলছে’- এমন চটকদার বিজ্ঞাপনে এখন সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। পত্রিকার ভেতরে লিফলেট দিয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে এমন সুসংবাদ। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া না করতে এখনই বুকিং দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে বিজ্ঞাপনে। সাইনবোর্ড ছাড়াই অফিস খুলে যুক্তরাজ্যের ওয়ার্কপারমিট ভিসার প্রসেসিংয়ের নামে বুকিং নেয়াও শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। অথচ ওয়ার্কপারমিট ভিসায় যেসব রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাজ করার কথা সেই রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠনের নেতাদের বলছেন ‘চটকদার এই বিজ্ঞাপনগুলো পুরোদমেই ভূয়া’। ওয়ার্কপারমিটের নামে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের প্রতারক চক্র ফাঁদ পেতেছে। যুক্তরাজ্যগমনেচ্ছুদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেই তারা ওয়ার্কপারমিট ভিসা চালুর ভূয়া তথ্য প্রচার করছে। এসব প্রতারক চক্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনস্থ বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ) । বিসিএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনামুল হক চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল ওলি খান জানান, একসময় ওয়ার্কপারমিট ভিসায় ব্রিটেনস্থ রেস্টুরেন্টগুলোতে কাজ করতে প্রচুর বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে গেছেন। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। ইউরোপের বাইরের লোকজনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রেস্টুরেন্টের ওয়ার্কপারমিট। এনিয়ে সেখানকার কারি শিল্পের সাথে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালে ট্রাফলগার স্কয়ারে বিশাল সমাবেশ করে ওয়ার্কপারমিট ভিসার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান সেখানকার বাংলাদেশি কারিশিল্প ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে তারা ব্রিটেনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করে নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক দিক সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এই দাবিতে গত বছর প্রায় ৩ হাজার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। তাদের আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ওয়ার্কপারমিট ভিসা বন্ধের নেতিবাচক দিকগুলো কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। এর অংশ হিসেবে মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজারি কমিটি অতিসম্প্রতি ব্রিটেন সরকারকে ইউরোপের বাইরের দক্ষ ও অদক্ষ রেস্টুরেন্ট কর্মী নিয়োগের সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করে। এদিকে, এই সুপারিশের পরই ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মানবপাচারকারী একটি প্রতারকচক্র ওয়ার্কপারমিটে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করে। ভিসার জন্য প্রতারকরা বিদেশগমনেচ্ছুদের সাথে ১০-১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে অগ্রীম ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকাও নিচ্ছে।
বিসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল ওলি খান জানান, ওয়ার্কপারমিট ভিসা চালুর বিষয়টি এখনো সুপারিশ পর্যায়ে রয়েছে। ব্রিটেন সরকার এটি গ্রহণ করলেও ভিসা চালু হতে অনেক সময় লাগবে। সুপারিশ গৃহিত হলে ২০২০ সালের দিকে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিতে পারে ব্রিটিশ সরকার। তার ফলাফলের ভিত্তিতে নেয়া হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। তিনি আরও জানান, ওয়ার্কপারমিট ভিসা চালু হলে ব্রিটেনে যেতে দালাল ধরে লাখ লাখ টাকা খরচের প্রয়োজন নেই। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নূন্যতম খরচে যে কেউ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখনই ওয়ার্কপারমিট ভিসার জন্য কারো সাথে চুক্তি সম্পাদন বা অগ্রীম টাকা দিয়ে প্রতারিত না হওয়ারও আহ্বান জানান বিসিএ নেতারা। বিসিএ নেতৃবৃন্দ জানান, যেসব রেস্টুরেন্টে টেকওয়ে সার্ভিস ছিল আগে সেসব রেস্টুরেন্ট ওয়ার্কপারমিটের আওতায় ছিল না। বর্তমান সুপারিশে ওইসব রেস্টুরেন্টকেও ওয়ার্কপারমিটের আওতাভূক্ত করতে বলা হয়েছে। এই সুপারিশ কার্যকর হলে ব্রিটেনের কারি শিল্পে যে জনবল সংকট রয়েছে সেটা পূরণের পাশাপাশি বৃটেনের অর্থনীতিতে বাংলাদেশী কারি শিল্পের অবদানও বাড়বে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn