এম. এ রাজ্জাক-তাহিরপুরের পর্যটন স্পট বিকি বিলের শাপলা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন গরু মহিষের খাবারে পরিণত হয়েছে। এতে করে বিকি বিলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য পড়েছে হুমকির মুখে। গত বছর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক লাল শাপলার বিকি বিলে সরেজমিন পরিদর্শন করে পর্যটন স্পট হিসেবে ঘোষণা করেন। দেশ বিদেশের পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য নতুন এলাকা হিসেবে বিলের তীরে একটি সাইনবোর্ডও টানিয়ে দেন তিনি। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিকি বিলের সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। স্থানীয়রা লাল শাপলার বিলটিকে রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল ও বোরখাড়া গ্রামে লাল শাপলার বিকি বিলের অবস্থান। হলহলিয়ার চক ও দিঘলবাঁক মৌজার প্রায় ১৪.৯৫ একর জায়গা নিয়ে এই বিল। গত দুই থেকে তিন বছর ধরে পাহাড়ের কাছে হাওরের এমন সৌন্দর্য স্থানীয়দের তো বটেই, মুগ্ধ করছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজনকেও।  কিন্তু এ বছর বিকি বিলের এমন সৌন্দর্য নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক কালে কয়েক দফা বন্যা আর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ অবাধে শাপলার ডাটা উপড়ে গরু মহিষের খাদ্যের যোগান দেয়ায় এবার বিলের সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে।
ঘুরতে আসা এক পর্যটক জানান, বিকি বিলে যখন শাপলা ফুটে তখন তাকালে মনে হয় কেউ যেন লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। যে দিকে চোখ যায়, শুধু লাল শাপলা। কিন্তু এ বছর এ দৃশ্য দেখতে না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে পর্যটকদের।  সরেজমিনে গিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় একমাস ধরে বিলের পার্শ্ববর্তী বোরখাড়া, আমবাড়ি, কাশতাল গ্রামের কিছু কৃষকরা গরু, মহিষের খাবার হিসেবে লাল শাপলার ডাটা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নৌকা বোঝাই করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে গবাধি পশুর খাবারের জন্য। বিল থেকে কেন শাপলা নেয়া হচ্ছে জানাতে চাইলে এক কৃষক জানান, পর্যাপ্ত পরিমান খড় না থাকায় এ এলাকার কৃষকরা তাদের গরু, মহিষকে খড়ের পরিবর্তে বিলের লাল শাপলা খাওয়ান। তবে, বিলে গত বছর যে পরিমাণ শাপলা ফুটেছিল, এ বছর তেমন ফুটেনি।
বড়দল (উত্তর) ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মো. মাসুক মিয়া জানান, লোকজন বিল থেকে শাপলা তুলে নৌকা বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে গরু মহিষের খাবার হিসেবে। বাধা দিলেও তারা মানছেন না। বিলের যে সৌন্দর্য ছিল সে সৌন্দর্যটা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। বড়দল (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম জানান, কয়েক দফা বন্যায় বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। যা কিছু অবশিষ্ট আছে তাও বিলের শাপলা উপড়ে নষ্ট করা হচ্ছে। এসময় বিকি বিলের সৌন্দর্য রক্ষায় দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সহযোগীতা কামনা করেছেন তিনি।  জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পটটির সৌন্দর্য রক্ষায় খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn