নিজস্ব প্রতিবেদক :: চেয়েছিলেন লিজার সঙ্গে ঘর বেঁধে একটি স্বপ্নিল জীবন পার করতে। লিজার ভালোবাসাকে আঁকড়ে  ধরে প্রেমের তরিতে সওয়ার হয়ে পাড়ি দিতে জীবন-পারাবার। কিন্তু ফয়সল জানতেন না, একদিন লিজার প্রতি অন্ধ প্রেমই তাকে ঠেলে দিবে অন্ধকার-অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ হয়ে তাকে দিন কাটাতে হবে হাসপাতালের বিছানায়।  হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার হাসেরগাও গ্রামের আহসান উল্ল্যার ছেলে, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অনার্স (গণিত বিভাগ) ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ফয়সল মিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া গ্রামের প্রবাসী আব্দুল হাইয়ের কন্যা মাহফুজা আক্তার লিজার।পরষ্পর প্রতিশ্রুতিব্ধ হয়েছিলেন, একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়ে কাটিয়ে দেবেন জীবনের বাকি দিনগুলো। কিন্তু এতে বাধ সাধেন লিজার মা লিপি আক্তার। গত শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) ফয়সলকে তাদের বাড়িতে খবর দিয়ে এনে তাকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লোকজন দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করান।
ফয়সল এখন সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিসাধীন। নির্মম নির্যাতনের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে শুয়ে আছেন ওসমানী হাসপাতালের বিছানায়। মানুষ দেখলেই আঁতকে উঠছেন। মুখ ঢেকে ফেলছেন কাপড় দিয়ে। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের মতো অসংলগ্ন কথা। এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে বাহুবল থানায় ১০ জনকে আসামি করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ফয়সলের মা রাবিয়া খাতুন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ফয়সলের প্রেমিকা লিজার মা লিপি আক্তারকে। ফয়সলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফয়সলের সঙ্গে বাহুবলের মিরপুর ইউনিয়নের দ্বিমুড়া এলাকার এক প্রবাসী আব্দুল হাইয়ের কন্যা মাহফুজা আক্তার লিজা একই কলেজে পড়ে। কলেজে আসা যাওয়ার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের প্রেমের সম্পর্ক মেয়েটি তার মাকে জানায় এবং ফয়সলকে পরিচয় করিয়ে দেয়। একপর্যায়ে মেয়েটির পরামর্শে মা ফয়সলকে নিমন্ত্রণ জানায়।
ফয়সল দেখা করতে গেলে মেয়েটির পরিবারের লোকজন তাকে হাত ও পা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে। এক পর্যায়ে তার অবস্থার অবনতি হলে তারা তাকে ডাকাত বলে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে বাহুবল মডেল থানার পুলিশ এসে মুচলেকায় পরিবারের জিম্মায় দেন। পরে ফয়সলের মা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে, ফয়সলকে মারপিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, নির্যাতনের শিকার ফয়সলের মাথার পাগড়ি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে হাত ও পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় রাতভর নির্যাতন করে প্রেমিকার পরিবারের লোকজন। ফয়সলের মা বলেন, মারপিটের সময় আমার ছেলের বুকে প্রচণ্ড আঘাত পায় এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

পুলিশ গিয়ে ফয়সলকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া গ্রামের মূল অভিযুক্ত সালা উদ্দিন (৫২) ও মঈন উদ্দিনকে (৪০) আটক করেছে এবং তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও শিগগির আটক করা হবে। অপরদিকে, মারপিটে গুরুতর আহত ফয়সলকে চিকিৎসার জন্য শনিবার (৩১ অক্টোবর) হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। তবে ফয়সলের অবস্থার অবনিত হলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এম.এ.জিও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রবিবার (১ নভেম্বর) বিকালে ফয়সলকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  গতকাল সোমবার বিকেলে ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ফয়সল ওসমানী হাসপাতালের ৩য় তলার ১১ নং ওয়ার্ডে চিকিসাধীন। নির্মম নির্যাতনের ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও আঘাতের চিহ্ন। মানুষ দেখলেই আঁতকে উঠছেন। হাতরে কাছে যে কাপড় পাচ্ছেন মুখ ঢেকে ফেলছেন তা দিয়ে। যেন এ পৃথিবীর আলো-বাতাস আর মানুষজন থেকে নিজেকে আড়াল প্রাণপণ চেষ্টা। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের মতো অসংলগ্ন কথা। ফয়সল চুনারুঘাটের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি একজন কোরআনে হাফেজও।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn