‘শত্রুর জন্যও এটা কামনা করি না’
‘৯৫’ সংখ্যাটাকে আপনি নিশ্চয় খুব ঘৃণা করেন? তামিম ইকবাল হাসলেন, ‘বুঝেছি, কেন এই প্রশ্ন করছেন। ৯৫ রানে এর আগেও আউট হয়েছি।’ এর আগেও আউট হয়েছেন, এতে আসলে কিছুই বলা হলো না। তামিম ইকবাল পড়েছেন ‘৯৫’-এর ফেরে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নার্ভাস নাইনটিজে কাটা পড়েছেন চারবার। তিনবার ওয়ানডেতে, একবার টেস্টে। প্রতিবারই তামিম ইকবালের স্কোর ৯৫! হৃদয় খুঁড়ে কেউই বেদনা জাগাতে ভালোবাসে না। তারপরও নিষ্ঠুর অনুরোধটা রাখলেন তামিম। ফিরে দেখলেন দুঃসহ সেই চারটি ‘৯৫’—
১
১২ ডিসেম্বর ২০১০
ওয়ানডে, বিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
ওই ইনিংসটাতে আমি ছক্কা মারার রিদমে ছিলাম। যত দূর মনে পড়ে, এর আগেই ৬-৭টা ছক্কা মেরেছিলাম (৭টা মেরেছিলেন)। ৯০-এর ঘরেও তাই ছক্কা মারার চিন্তাই মাথায় ঘুরছিল। আরেকটি ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করতে চেয়েই আউট হয়েছিলাম। একই পরিস্থিতিতে আমি এখন এটা কখনোই করি না। যে বোলারটার (দাবেংওয়া) বলে আউট হয়েছিলাম, এর আগে ওকেও ২টা ছক্কা মেরেছিলাম। মনে আছে, ক্যাচটা উঠেছিল ডিপ মিড উইকেটে। নিজের মাঠে খেলা, খুব খারাপ লেগেছিল।
২
২১ অক্টোবর, ২০১৩
টেস্ট, বিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, মিরপুর, ঢাকা
মনে আছে, ঠিক আগের বলটাতেই ওরা স্লিপ সরিয়ে নিয়েছিল। আর আমি লেট কাট করে চার মেরেছিলাম। পরের বলে আবারও তাই মারতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্লিপ না থাকলেও গালি ছিল। বলটাতে এক্সট্রা বাউন্স থাকায় সেই গালিতেই ক্যাচ চলে গেল। গালির ফিল্ডার ছিল কেন উইলিয়ামসন, বোলার নিল ওয়াগনার।
৩
৫ মার্চ ২০১৫
ওয়ানডে
বিপক্ষ স্কটল্যান্ড
নেলসন, বিশ্বকাপ ২০১৫
আগের দুবার যেমন উইকেট ছুড়ে দিয়েছিলাম, এবার তা নয়। বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লু হয়েছিলাম। সে কারণে খুব বেশি দুঃখ নেই। কারণ, নিজের দোষে আউট হইনি। তবে দুঃখ ছিল অন্য—সেঞ্চুরিটা হলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিটা আমার হতো। সেটা অবশ্য বড় ব্যাপার নয়। আমার এক ভাই (মাহমুদউল্লাহ) তো তা করেছে।
৪
৫ জুন ২০১৭
ওয়ানডে, বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া
ওভাল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭
এদিন অনেক কষ্ট করে ব্যাটিং করেছি। একটা তৃপ্তি তাই আছে। যদিও ৯৫ রানে আউট হলে কারোরই খুশি হওয়ার কথা নয়। তবে একটাই সান্ত্বনা, আমি উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসিনি। যে শটটা ইনিংসজুড়ে পুরো কন্ট্রোল নিয়ে খেলেছি, সেটাই খেলেছিলাম। কিন্তু টপ এজ হয়ে গেল। বাজে শট খেলে আউট হলে বেশি দুঃখ হতো। তা হয়নি বলে দুঃখটা একটু কম। তা ছাড়া আমি ভাগ্যে খুব বিশ্বাস করি। ওপরওয়ালার ওপর বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, এটাই লেখা ছিল। এটাই হয়েছে।
পরিস্থিতি-বোলিং বিবেচনায় এই ৯৫ কি অনেক সেঞ্চুরির চেয়েও ভালো? সমস্যা হলো, ৯৫ কেউ মনে রাখে না। কত কষ্ট করে এই রানটা করেছি, সেটাও কেউ মনে রাখবে না। শেষ পর্যন্ত তো এটা ফিফটি হিসাবেই গণ্য হবে। আবার এটাও ঠিক, সেঞ্চুরি করার পর দল হারলে সেটিও কেউ মনে রাখে না। আমিও ঠিক এনজয় করি না।
সেই শূন্যতার অনুভূতি
এটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। এত খারাপ লাগে, এর চেয়ে খারাপ ফিলিং পৃথিবীতে খুব কমই আছে। আউট হয়ে ফিরে আসার সময়টা…উফ্, অসহ্য! এটাও ভাবি, আমি চারবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছি মানে চারটি সেঞ্চুরি মিস করেছি। আমি যখন টিভিতে অন্য দলের খেলা দেখি, আমার শত্রুও ৯০ রানে থাকলে কখনো চাই না যে, সে সেঞ্চুরির আগে আউট হয়ে যাক। কারণ তাতে কেমন খারাপ লাগে, সেই অনুভূতিটা আমার জানা।