সরকার সবার কথা শুনেঃ রাস্তার দেয়াল লিখনও গুরুত্ব পায়-এমএ মান্নান
আগামী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বুধবার দুপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেট ইউ নিভার্সিটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বাজেট নিয়ে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বোবা বা কানা নয়। আমরা সবার কথা শুনি। আমরা কথার মূল্যায়ন করি। রাস্তার দেয়াল লিখনের কথাও আমাদের কাছে গুরুত্ব পায়। প্রস্তাবিত বাজেটে; বিশেষ করে আবগারি শুল্ক, ব্যাংকে মূলধনের ঘাটতি মেটাতে ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি এমন মন্তব্য করেন বাজেট নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনাকে বর্তমান সরকারের ক্রেডিট মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে যেভাবে আলোচনা হচ্ছে, তা নিয়ে আমি সবচেয়ে আনন্দিত। এটা সরকারের ক্রেডিট। কারণ অতীতে বাজেট ছিল একটা লুকানো বিষয়। ভীতির বিষয়। না জানি কি হচ্ছে! কিন্তু ‘ইট ইজ এ স্ট্রেট বাজেট’ যে বাজেটকে সবাই উলট-পালট করে দেখতে পাচ্ছে। সবাই মতামত প্রকাশ করতে পারছে। এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচেয়ে বড় অর্জন। কারণ তিনি বাজেটে সবাইকে স¤পৃক্ত করতে পেরেছেন।
ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক লাখ টাকা পর্যন্ত মওকুফ করে দিয়েছি। আর ব্যাংকে এক লাখ টাকা আছে এমন হিসাবধারী গ্রাহক প্রায় ৮৫ শতাংশ। তবু বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি আলোচনা হচ্ছে। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে চিন্তাভাবনা চলছে। একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে।
এ সময় হাসতে হাসতে তিনি বলেন, পাঁচ লাখ টাকার উপরে আবগারি শুল্ক থাকার কথা। তবে বিষয়টা আমি ক্লিয়ার নয়। একসময় তো দশ লাখও তো বলেছি। দশ লাখ হলে তো আবার প্রতি ধাপে শুল্ক হার দুই হাজার, তিন হাজার হবে।
“১৯৪৭ সাল থেকে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান। আগে কম ছিল। বেড়ে বেড়ে ৫শ টাকা হয়েছে। এটা সব অ্যাকাউন্টে ছিল। এক হাজার টাকার অ্যাকাউন্টেও ছিল। এক কোটি টাকার অ্যাকাউন্টেও ছিল। এখন বড় অ্যাকাউন্টে সামান্য বাড়িয়ে ৫শ থেকে ৮শ টাকা করা হয়েছে।”
ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে দুইশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, ব্যাংকগুলো বছরের পর বছর সেবা দিচ্ছে। তাদের তো আমরা মেরে ফেলতে পারি না। আপনার একটি দুধ ওয়ালা গাভীর অসুখ হলে তাকে তো আপনি মেরে না ফেলে তার চিকিৎসা করাবেন। তবে আমরা ব্যাংকে দুর্নীতি যেন না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখছি। দুর্নীতির দায়ে কয়েক জন জেলেও রয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি কাজ করতে প্রয়োজনীয় জমি নিয়ে বাংলাদেশে যে ঝামেলা হয়, তা পৃথিবীর কোথাও হয় না। কারণ এদেশে যদি কেউ শুনে কোথাও সরকারি কোন উন্নয়ন কাজ বা রাস্তা হবে তখন রাতারাতি সেখানে ঘর বানায়, দোকান বানায়। তারপর নিজের জমি বলে দাবি করে। এর ফলে জমি কিনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। ফলে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতির বিষয় অস্বীকার করা যায় না। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার। নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন হয়েছে ২০১২ সালে। এবছর তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু হোঁচট খেতে হবে, কষ্ট হবে। তবু আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বাজেটের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রেসিডেন্ট ডা. এ এম শামীম।