আগামী মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি যাবেন? বাংলাদেশ ও ভারতের মতুয়া সমপ্রদায়ের তীর্থস্থান হলো ওড়াকান্দি। ভারতের গণমাধ্যম বলেছে,  সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পরে সব  থেকে বেশি উপকৃত হবেন কথিত মতে বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থী বাঙালিরা। এর  সিংহভাগই  মতুয়া সমপ্রদায়ের মানুষজন। আর তারা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির বিরাট  ভোটব্যাংক। তাদের একটি বড় অংশ অবশ্য মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও আছেন। তবে বিজেপি  চাইছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তারা জয় পাক। বিদায় নিক মমতাদি। দখলে আসুক রাইটার্স বিল্ডিং। ১৯৪৭ সালের পরে তৈরি হোক নতুন ইতিহাস। পর্যবেক্ষকরা একমত, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে মতুয়াদের দলে ভেড়ানোর কোনো চেষ্টাই বাদ রাখবেন না মি. মোদি।  তাই  মতুয়া ভাবাবেগকে উস্কে দিতে আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে মতুয়া ধর্মের প্রবক্তা শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান পরিদর্শনে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হরিচাঁদ ঠাকুর ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ অবিভক্ত বাংলার  গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার অন্তর্গত ওড়াকান্দির পার্শ্ববর্তী সফলাডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মূলত মতুয়া ঠাকুর বাড়ির বংশধর ভারতীয় সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বলে দাবি করছে ভারতীয় মিডিয়া।
মতুয়া মহা সংঘের কর্মাধিপতি হলেন  সাংসদ  শান্তনু ঠাকুর। তিনি মিডিয়াকে জানালেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস করে বাংলাদেশ থেকে আসা কোটি কোটি মতুয়া সমপ্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব দিয়ে ভারতে ভালোভাবে বাঁচার অধিকার দিয়েছেন। সমগ্র মতুয়া মহাসংঘ তার কাছে কৃতজ্ঞ।  সেই জায়গা থেকেই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন  যে,  বাংলাদেশে মি. মোদির সফরের সময় ওড়াকান্দিতে শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মভিটা একবার পরিদর্শন করতে। শান্তনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার বক্তব্য শুনেছেন এবং সফরসূচিতে ওড়াকান্দি বিষয়টি রাখবেন বলে জানিয়েছেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বনগাঁয় আমাদের ঠাকুর বাড়িতে এসেছিলেন এবং আমার ঠাকুরমা এবং মতুয়া মহাসংঘের বড়মা বীণাপাণি দেবীকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে তাকে কথা দিয়েছিলেন  যে মতুয়াদের তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবেন। অবশ্য দিল্লিতে সরকারিভাবে এ সংক্রান্ত কর্মসূচির ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সাংসদ শান্তনু অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারে আসার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি  রেখেছেন। সেই কারণেই সমগ্র সমাজের পক্ষ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীকে ওড়াকান্দি সফরের জন্য অনুরোধ করেছি। কারণ, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী যদি হরিচাঁদ ঠাকুরের বাসস্থানে যান, তাহলে তিনি আরো ভালোভাবে আমাদের মতুয়া ধর্মের নীতি-আদর্শ এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অবগত হবেন, যা ভবিষ্যতে ভারতে মতুয়া ধর্মের এবং ধর্মাবলম্বী মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে বলেই আমার ধারণা।’’ বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে জন্মগ্রহণকারী হরিচাঁদ ঠাকুর মূলত ওড়াকান্দি থেকেই মতুয়া ধর্মের প্রচার এবং প্রসার শুরু করেছিলেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘‘সমাজ বিবর্তনের লক্ষ্যে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে পাদপ্রদীপের আলোয় এনে তাদের সমাজের মূলস্রোতে যুক্ত করার জন্যই হরিচাঁদ ঠাকুরের এই ধর্মের প্রবর্তন। এখনো পর্যন্ত ওড়াকান্দিতে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সফর করেননি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ভারতবর্ষে মতুয়াদের উন্নয়নের  ক্ষেত্রে এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে মতুয়া ধর্মাবলম্বী মানুষেরা।’’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn