মিসবাহ উদ্দীন আহমদ :: স্বাধীনতাত্তোর দেশের রাজনীতিতে একধরনের ‘মিথ’ প্রচলিত আছে সিলেট-১ আসনে যে দল বিজয়ী হয়; সরকারও হয় সেই দলের। হযরত শাহজালাল (র.) সহ অন্যান্য সাধকপুরুষদের স্মৃতিধন্য পূণ্যভূমি সিলেট এ কারণে সারাদেশের সকল সংসদীয় আসনগুলো থেকে মর্যাদাপূর্ণ। প্রতি নির্বাচনেই এ আসনের গভীর দৃষ্টি থাকে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান বিরোধীদল জাতীয়পার্টি ও সাবেক বিরোধীদল বিএনপির। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের দেড় বছরের বেশি সময় বাকি থাকলেও এখন থেকেই নড়েচড়ে বসেছে দলগুলো। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে সংসদীয় আসনগুলোতে চলছে প্রার্থীতা নির্ধারণের।
এবার সিলেট-১ আসন নিয়ে চলছে সরব আলোচনা। আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনটিতে শোনা যাচ্ছে একাধিক প্রার্থীর নাম। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বর্তমান বিরোধী দল ও সাবেক বিরোধী দল। সর্বশেষ আলোচনাতে দল দু’টির একজনের বেশি প্রার্থীর নাম নেই আলোচনায়। প্রতিটি দলই বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। বিগত দিনে এই আসন থেকে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করেছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বর্তমানের এই আসনের সংসদ সদস্য।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ নতুন-পুরাতনসহ থেকে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। পুরাতনদের মধ্যে আলোচনায় আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তাঁর অনুজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. একেএম মোমেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। আর আওয়ামী লীগ থেকে দলের মনোনয়ন আলোচনায় আছে নতুন দু’টি নাম; সিলেটের কাজীটুলার সন্তান সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের কৃতিসন্তান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সপ্তম গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন। ছহুল হোসাইনের পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে- নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ছহুল হোসাইন কোন কিছু জানাননি। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতাদের কাছ থেকে ছহুল হোসাইন আওয়ামী লীগের টিকেট পাচ্ছেন এমন শোনাগেছে। এ ব্যাপারে ছহুল হোসাইনের সাথে আলাপ করা হলে তিনি এখন ব্যস্ত রয়েছেন জানান। পরে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করবেন জানান।
বিগত দিনে বিভিন্ন সভায় বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বললেও এখন আবার শোনা যাচ্ছে তিনি অংশ নিবেন। পাশাপাশি তার সাথে নির্বাচনের মাঠে আছেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় পরিষদের চেয়ারম্যান ড. এ কে আবদুল মোমেন। এই আসন থেকে অর্থমন্ত্রী ও মোমেনের সাথে সমানতালে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ প্রায় সময় প্রকাশ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। নগরীর আলীয়া মাদরাসা মাঠে প্রধানমন্ত্রী ওআওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সামনে প্রকাশ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সর্বশেষ বিগত ঈদুল ফিতরেও তাকে সংসদে দেখতে চান এমন দাবিতে নগরী জুড়ে শোভিত হচ্ছে ব্যানার-ফেস্টুন, তোরন। দেশের রাজনীতিতে তারকা ব্যক্তিত্ব, ক্ষণজন্মা অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের উত্তরসূরি হতে এ আসনটি বিএনপির মনোনয়ন তালিকা একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। তিনি বিএনপির সাবেক এমপি খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে। বেশ কয়েকবছর ধরে খন্দকার মালিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড। প্রথমদিকে এই আসন থেকে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পত্মী ডা. জোবাইদা রহমানের নাম শোনা গেলেও তারা কেউই এই আসন থেকে নির্বাচন করার সম্ভাবনা নেই। এখানে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরই হচ্ছেন বিএনপির একমাত্র প্রার্থী।

এদিকে দেশের বর্তমান বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হিসেবে সিলেট-১ আসনে আলোচিত হচ্ছে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সর্বশেষ সিলেট সফরে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠের জনসভায় এরশাদ নিজে এখান থেকে নির্বাচনের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি সিলেটকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে অভিহিত করেন।

প্রসঙ্গত, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (দশম) নির্বাচিত হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্বাচনে তার বিপরীতে কোন প্রার্থী ছিল না। এর আগেরবার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী সাইফুর রহমানকে পরাজিত করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর সাইফুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর বিএনপি এখনো এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নবম সংসদ নির্বাচনে মুহিত ১ লাখ ৭২ হাজার ৮১৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর সাইফুর রহমান পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২১৩ ভোট। এটিই ছিল সাইফুর রহমানের জীবনের শেষ নির্বাচন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn