শহীদনুর আহমেদ :: ৫ দিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ভাসছে সুনামগঞ্জের ৭ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। শুক্রবার দিনের বেলা সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও রাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত নদীর বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘটনায় বৃষ্টিপাতা রেকর্ড করা হয়েছে ৮৫ মিলিমিটার। এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ধর্মপাশা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার কবলে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন  করছেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œআয়ের পরিবারের মানুষ।  বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন অনাহারে-অর্ধাহারে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করলেও বিপাকে পড়েছেন গৃহপালিত পশু নিয়ে। মাঠঘাট, উঁচু স্থান বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় গৃহপালিত গরু, মহিষ, ছাগলসহ হাঁসমুরগীদের অনত্র নিয়ে যাচ্ছেন বানবাসী মানুষ। গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। যেখানে বন্যায় আক্রান্ত হয়ে নিজেদের খাবার ও আবাসনের সংস্থান হচ্ছে না যেখানে গৃহপালিত পশু নিয়ে  মরার উপর খাড়ার ঘাঁয়ে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের ডুংরিয়া গ্রামের বড় গৃহস্থ মতিন মিয়ার ৪০টির বেশি গরু রযেছে। বন্যার পানিতে গ্রামের কীত্তা ও উঁচু স্থান এবং বাড়ীর আশপাশ ডুবে যাওয়ায় গুরু নিয়ে মহাবিপদে আছেন তিনি। বন্যায় বাড়িতে পানি উঠলে নিজেদের জায়গা অন্যত্র হলেও এতোগুলে গরুর কি হবে এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তাঁর। তাই কেবল পানি কমার প্রার্থনা তার।
পৌরসভার বড়পাড়া এলাকার কাবুল মিয়ার দীর্ঘদিন ধরে দুটি ষাড়  পালন করছেন। কুরবানীর ঈদে দুইটি ষাড়কে বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছে ছিল তার। চারদিক থেকে পানি আসায় ষাড় দুটি নিয়ে বিপাকে আছেন তিনি। ধানের কুড়ো খাইয়ে কোনো মতে ষাড় দুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি। এমনভাবে পানি বাড়তে থাকলে বিড়ম্ভনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের পুরান পৈন্দা গ্রামের বাসিন্দা রাম রবি দাশের বাড়ীতে হাটুর উপরে পানি। ছেলে সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রবি। বেশি বিপদে আছেন গোয়ালে থাকা ৩টি গরু নিয়ে। গোয়ালঘরে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে খড়ের গাদা। গরু আর সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন এ নিয়ে চিন্তিত তিনি। রবিদাশের মতো মোহনপুর ইউনিনের অন্তত অর্ধশত পরিবার গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।  ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের হরিপুর নতুন হাটির মন্তুষ সরকারের বসত ঘরে পানি উঠায় গোয়ালে থাকা গরু নিয়ে প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে। প্রতিবেশির বাড়িতে  কোনোভাবে নিজেদের ঠাঁই হলে গরু নিয়ে বিপাকে আছেন মন্তুষ।  এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য পায়নি মন্তোষের পরিবার।  এমন অবস্থায় সরকারি সাহায্যের কামনা করেন তিনি।  বন্যায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে দিনে একাধিকবার চেষ্ঠা করে তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn