অনুজ সহকর্মীর স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় রাজধানীর ভাটারার দর্জি দোকানের কর্মী আনোয়ার হোসেনকে। বাবার বয়সী আনোয়ার হোসেনের এ অপকর্মের বিষয়টি কানে আসার পরই খুনের পরিকল্পনা পাকা করে একই দর্জি দোকানের কর্মী সোহেল। কিছু দিন আগেও আনোয়ার ও সোহেলের পরিবার এক সঙ্গে বসবাস করত। সম্প্রতি তাদের দুই পরিবারের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে তারা আলাদা বাসা নেন। ধর্ষণের নির্মম প্রতিশোধ নিতে সোহেল গত ৯ জুন ভাটারার বসুন্ধরার জগন্নাথপুর এলাকায় নিজের বাসায় ইফতারের দাওয়াত দেন আনোয়ার হোসেনকে। এর ঠিক তিন দিন আগে এই বাসায়ই সোহেলের অনুপস্থিতিতে স্ত্রীকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আনোয়ার। পরে বিষয়টি ফাঁস না করার জন্য হুমকিও দেয়। বলা হয়, জানাজানি হলে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই হত্যা করা হবে। ইফতারের দাওয়াত পেয়ে আনোয়ার বাসায় আসার পরই সুযোগ বুঝে তাকে হত্যা করে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আনোয়ার হোসেন ও সোহাগ একই বাসায় দীর্ঘদিন ভাড়া থাকতেন। তারা স্থানীয় স্ট্যান্ডার্স টেইলার্স নামের একটি দোকানে কাজ করতেন। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকায় তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সম্প্রতি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে দু’জনের স্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত রেষারেষি শুরু হয়। পরে গত মাসে তারা আলাদা বাসা ভাড়া নেন।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সোহাগ ও তার স্ত্রী আনোয়ার হোসেনকে অভিভাবকের মতো মানতেন। সোহাগের বাবা না থাকায় আনোয়ারকে বাবা বলে ডাকতেন। ঘটনার তিন দিন আগে ৬ জুন তারা একসঙ্গে দোকানে কাজ করছিলেন। সোহাগকে না জানিয়ে তার বাসায় যান আনোয়ার। স্ত্রীকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন আনোয়ার। পরের দিন সোহাগ বিষয়টি জানতে পারেন।

আনোয়ারের এই পশুত্ব মেনে নিতে পারেননি সোহেল। পরে আনোয়ারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সোহেল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইফতারির দাওয়াত দিয়ে বাসায় ডেকে ৯ জুন তাকে খুন করা হয়। নিহতদের স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলেন, ইফতারের দাওয়াত দেয়ার পর থেকেই আনোয়ার নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশের ধারণা, আনোয়ারকে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর তার লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। নিহত আনোয়ারের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আবুল হোসেন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহজাহান সাজু যুগান্তরকে জানান, আনোয়ার হোসেন খুনের জট খুলেছে। তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে বরিশালে অভিযান চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn