হবিগঞ্জে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের উপস্থিতিতেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও তার সমর্থকরা। প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় জেলা আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মী ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে তাদের বাধা দিতে একই স্থানে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকশ’ নেতা-কর্মী। এতে শহরে থমথমে ভাব বিরাজ করে। বন্ধ করে দেয়া হয় স্বাভাবিক যান চলাচল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।  দলীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, মঙ্গলবার হবিগঞ্জে সাংগঠনিক সফরে আসেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক।

দিনে জেলা শহরের বিভিন্ন প্রোগ্রাম শেষে রাতে যোগ দেন শায়েস্তাগঞ্জ আওয়ামী লীগের বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীসহ তার কয়েকজন সমর্থক। একপর্যায়ে কেয়া চৌধুরী বক্তব্য দেয়ার সময় উত্তেজিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার মাইক বন্ধ করে দেন। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের সামনেই সভায় হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কেয়া চৌধুরীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। এসময় তাকে নিরাপত্তা দিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুশান্ত দাশ, সাবেক  জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অনুপ কুমার দেব মনা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও আক্রমণ করে হামলাকারীরা। এসময় বিস্ময়ের চোখে এসব কর্মকাণ্ড দেখছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফিক। হামলাকারীরা অভিযোগ করেন- কেয়া চৌধুরী ও তার সহযোগীরা বিনা নিমন্ত্রণে সভায় উপস্থিত হয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সভা বানচালের চেষ্টা করেন। কেয়া চৌধুরী তার বক্তৃতায় বিতর্কিত একটি স্থানীয় পত্রিকার সাফাই গাওয়ায় তার মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্যদিকে, হামলার শিকার নেতারা অভিযোগ করেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার নিমন্ত্রণেই তার সভায় যান। এক পর্যায়ে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৩টায় শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের সামনে প্রতিবাদ সভার ঘোষণা দেন পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মাহবুবুর রহমান সানিসহ হামলার শিকার নেতারা। কিন্তু একই স্থানে জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে শ’ শ’ নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। এতে উভয় গ্রুপের মাঝে টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে উভয় গ্রুপকে সমাবেশ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে। এসময় স্থানীয় সংবাদকর্মী জাকারিয়া চৌধুরীও হামলার শিকার হন। তাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব দাশ পুরকায়স্থ ও শামসুদ্দিন মো. রেজা। তারা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ রিপোর্ট লেখা (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এ ব্যাপারে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী মানবজমিনকে জানান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিকের আমন্ত্রণে আমরা শায়েস্তাগঞ্জে বিজয় দিবসের সভায় যাই। মঞ্চে আমাকে দেখে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান তাকে বক্তব্য না দেয়ার কথা বলেন। এ ব্যাপারে মঞ্চে উপস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতা শফিক রাগান্বিত হয়ে ধমক দিলে সে শান্ত হয়। পরে সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নৌকায় কেন ভোট দিবেন এ ব্যাপারে কয়েকটি গণমাধ্যমের উদাহরণ তুলে ধরি। এক পর্যায়ে বিরোধীতাকারী ছাত্রলীগের উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা তার মাইক বন্ধ করে দেয় এবং আমার ওপর হামলা করে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এসময় শাহজালাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুশান্ত দাশ আমাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীর নির্দেশে সুশান্তকেও মারপিট করে হামলাকারীরা। এসময় কেন্দ্রীয় নেতা শফিক ভাই আমাকে রক্ষায় নিজেও ধাক্কাধাক্কির শিকার হন। তিনি না থাকলে তারা আমাকে শেষ করে ফেলতো। এ ব্যাপারে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর জন্য বুধবার কর্মসূচি দেয় দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এখানেও লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, শায়েস্তাগঞ্জে দলীয় জনসভায় বিনা দাওয়াতে উপস্থিত হয়েছিল সুশান্তসহ কয়েকজন। সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে মঞ্চে উঠতে চাইলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাকে বাঁধা দেয়। এতে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনার অজুহাতে দলের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কয়েকজন অবস্থান নিয়েছিল। এসময় জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী জানান, আমি সাংগঠনিক কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। তবে যতটুকু শুনেছি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার সামনে যে ঘটনা ঘটেছে তা একেবারেই নিন্দনীয় কাজ হয়েছে। সামনে উপজেলা নির্বাচনে দলে বিভক্তি সৃষ্টি হলে তা ফলাফলে প্রভাব পড়বে। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।

পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মাহবুবুর রহমান সানি জানান, কেন্দ্রীয় নেতার সামনে সাবেক নারী সংসদ সদস্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগের নেতারা। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করতে চেয়েছিলাম। এখানেও যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুরের নেতৃত্বে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে শ’ শ’ নেতা-কর্মীরা। আমাদেরকে কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn