রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামে ৬ বছরের শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক হারুন অর রশিদ। সে সায়মাকে নিপীড়নের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী হারুনের ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আসামি হারুন তার খালাতো ভাই পারভেজের রঙের দোকানে কাজ করত। পারভেজের বাসায়ই (১৩৯নং বনগ্রাম রোড, ৮ম তলা, ফ্ল্যাট নং-৮/এ) থাকত। ৫ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পারভেজের ছেলে আদিয়াতুর রহমান আরাফের (১ বছর) জ্বরের ওষুধ নিয়ে বাসায় ঢোকে। ওষুধ রেখে বাসা থেকে বের হয়েই ফ্ল্যাটের দরজার সামনে এসে ষষ্ঠ তলার ৬/বি নম্বর ফ্ল্যাটের আবদুস ছালামের মেয়ে সায়মাকে (৬) দেখে। সায়মা মাঝে-মধ্যেই তার মায়ের সঙ্গে পারভেজের বাসায় আসত এবং আরাফের সঙ্গে খেলাধুলা করত।

জবানবন্দিতে হারুন বলে, আমাকে দেখে সায়মা বলে, ‘চাচ্চু চাচ্চু আমাকে ছাদটা দেখিয়ে নিয়ে আসেন।’ তখন সায়মাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠি এবং সায়মাকে নবম তলার একটি খালি রুমে নিয়ে যাই। রুমটি আগে থেকেই খোলা ছিল। রুমে গিয়ে আমি তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলে সায়মা চিৎকার দিয়ে উঠে। তখন আমি ওর নাক-মুখ চেপে ধরি। এতে সে আরও জোরে চিৎকার দেয়। তখন আমি সায়মাকে বুকে নিয়ে গলা টিপে ধরি। তখন তার প্রায় আধমরা অবস্থা। ওই অবস্থায় আমি তাকে ফ্লোরে শুইয়ে প্যান্ট খুলে ধর্ষণ করি। হারুন জবানবন্দিতে বলে, ধর্ষণের পর সায়মাকে ফের গলা টিপে ধরি। রুমে থাকা রশি তার গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করি। কেননা সায়মা আমাকে চেনে। সে বেঁচে থাকলে আমার কথা বলে দেবে। পরে তার নিথর দেহ রান্নাঘরে রেখে দেই।

আদালতে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সায়মাকে হত্যার পরপরই মাগরিবের আজান হয়। সায়মাকে হত্যার পর পারভেজের বাসায় গিয়ে গোসল করে ঘাতক হারুন। জামা-কাপড় বদলে নিচে চলে যায় এবং কিছু সময় মহল্লায় হাঁটাহাঁটি করে। রাত ১১টার দিকে হারুন তার নিজ বাড়ি কুমিল্লায় চলে যায়। পথে মোবাইল থেকে সিমটি ফেলে দেয়। বাড়ি গিয়ে ঘটনাটি তার মা-বাবাকে বলে। ঘটনা শুনে তারা হারুনকে বকাঝকা করেন। পরে ঘাতক হারুন তার ফুপুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ সেখান থেকে হারুনকে গ্রেফতার করে। সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে ডিবি পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে বিচারকের খাস কামরায় নিয়ে যায়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে হারুনকে বিচারকের খাস কামরা থেকে বের করা হয়। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামি অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির। এ ধরনের অপরাধ কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। হারুন অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় শিশুটিকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

প্রসঙ্গত, ৫ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সায়মা ঘরে ফিরে না এলে তার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে বাড়ির নবম তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটের মেইন গেটের দরজা খোলা দেখে সায়মার বাবা আবদুস সালাম সেখানে গিয়ে মেয়ের স্যান্ডেল দেখতে পান। আরও খোঁজাখুঁজির পর ওই ফ্ল্যাটের কিচেনে সিঙ্কের নিচে গলায় শক্ত করে পাটের রশি দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় দেখতে পান। সায়মার পরনের হাফ প্যান্টটি সামনের দিকে ছেঁড়া ও গোপনাঙ্গ ছিল রক্তাক্ত। পরে পুলিশ এসে সায়মার লাশ বের করে। পরদিন শিশুর বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn