‘হিরো’ হতে চেয়েছিলেন এসআই আকবর!
এ.জে লাভলু :: আকবর হোসেন ভূঁইয়া। নায়োকোচিত ও সুঠাম দেহের অধিকারী পুলিশ (বরখাস্ত) কর্মকর্তা। ছিলেন সিলেটে বন্দরবাজার ফাঁড়ির (এসআই) ইনচার্জের দায়িত্বে। যদিও কোনো ছায়া ছবিতে কাজ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি তার। তবে তিনি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন। এতেই তিনি বেশ নাম-ডাক কুড়িয়েছিলেন। অনেকেই তাকে গরীবের দেব নামেই ডাকতেন। তবে তার স্বপ্নও ছিলো বাংলা কোনো নাটকে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করার। হয়তো সুযোগের অপেক্ষায়ও ছিলেন তিনি। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন হয়তো আর বাস্তব হয়ে ওঠবে না কোনোদিন। কারণ আকবর হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে রায়হান আহমদ নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনার পর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। হত্যার অভিযোগ ওঠার পর আকবরের আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। অনেকেই এখন তার বিরুদ্ধে মুখ খোলতে শুরু করেছেন। ফলে একে একে বেরিয়ে আসছে তার নানা অপকর্ম। এরপর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। যদিও পুলিশ এখনও তার কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। ঘটনার পর থেকে সিলেটের জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলে গ্রীণ বাংলায় তার অভিনীত বেশ কয়েকটি নাটকের দৃশ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। যে ভিডিওতে তিনি বলেছেন কিভাবে গ্রীণ বাংলা পরিবারের সাথে যুক্ত হয়েছেন। ওই ভিডিওতে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘কোনো মুভিতে যদি অভিনয় করার জন্য সুযোগ আসে, তাহলে অভিনয় করবেন নাকি’? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘একচুয়েলি মুভিতে অভিনয় করবো কিনা সেটা এখনও ভেবে দেখিনি। তবে ইচ্ছা আছে দেশের ভালো রোমান্টিক নাটকের হিরো হবো। এটাই ইচ্ছা।’ এদিকে এতদিন বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে যাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন আকবর। রায়হানকে হত্যার অভিযোগ ওঠায় তারাই এখন তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নিহত হন রায়হান উদ্দিন। রায়হান উদ্দিন সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন। রায়হানের স্বজনদের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে ডাক্তারের চেম্বারের কম্পাউন্ডার হিসেবে কর্মরত রায়হান কাজে বের হয়ে যাওয়ার পর রাত ১০টা থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ৪টা ৩৩ মিনিটে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে রায়হান তার মাকে কল করে কথা বলেন। ওই কলে রায়হান কাঁদতে কাঁদতে জানান যে তাকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখেছে এবং টাকা না দিলে ছাড়বে না। এরপরই ভোর সাড়ে ৫টায় চার হাজার টাকা নিয়ে রায়হানের চাচা হাবিব উল্লাহ ফাঁড়িতে গেলে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তাকে ১০টার সময় ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। তিনি ১০টায় টাকা নিয়ে গেলে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজে যেতে বলা হয় এবং সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে ৭টা ৪০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে এবং ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে স্বজনরা তার মর্গে দেখতে পান। তবে রায়হান আহমদের মৃত্যু ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনিতে হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। এদিকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় সোমবার (১২ অক্টোবর) সকালে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।