১০ মাস পরই জাতীয় নির্বাচন চায় আ.লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ও নির্ধারণ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে সুযোগ কম দিতেই আগামী ১০ মাস পরই জাতীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে দলটি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কের সঙ্গে আলাপকালে তারা বিষয়টি পূর্বপশ্চিমকে নিশ্চিত করেছেন।
সংবিধান মোতাবেক ২০১৮ সালের শেষদিকেই নির্বাচন হওয়ার কথা। জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচনের পক্ষেও মত রয়েছে আওয়ামী লীগে। আলাপকালে জানা গেছে, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচনে যে অংশ নেবে তা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতের কৌশলের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের মার্চ অথবা এপ্রিলে নির্বাচনের পক্ষে মত রয়েছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতার মধ্যে। অন্যদিকে দলটির অন্য নেতারা নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ২০১৮-এর ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন। যদিও তাদের সংখ্যা নগন্য।
ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগে যেভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সেই তুলনায় অন্য সব দল পিছিয়ে। চলতি বছরের মধ্যেই সারা দেশের ৩০০ আসনে নৌকার প্রার্থীদের নিজ নিজ অবস্থান আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও নির্বাচনী জনসভা করছেন সারা দেশে। এভাবে চলতি বছরের মধ্যে প্রস্তুতি গুছিয়ে আগামী বছরের প্রথমার্ধে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
কারণ হিসেবে এই পক্ষের নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা; বিশেষ করে তার চোখ এবং পায়ের অবস্থা সুবিধাজনক নয় বলে আমরা জেনেছি। দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা শেষে আগামী আট-নয় মাসের আগে তিনি রাজপথে নামতে পারবেন না বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগকে আরও চাঙ্গা করে নির্জীব বিএনপির বিপক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ হবে বলে ভাবছেন দলটির নেতারা। তাছাড়া দিন যত যাবে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের আচরণের কারণে জনপ্রিয়তা তত কমবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করে উদ্বোধন করাটাও কঠিন বলে ভাবছেন নেতারা। এসব কারণেই ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেকেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, নির্বাচন যথাসময়েই হওয়ার কথা থাকলেও কৌশলগত কারণে তা কিছুটা এগিয়ে আসতে পারে। সেটা আগামী বছরের শুরুর দিকেই হতে পারে বলেও জানান তিনি। এ লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে, এমনকি নির্বাচনে জিততে প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে রাজনৈতিক কৌশলের কারণে কিছুটা আগেও নির্বাচন হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সচিব রাশিদুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের বতর্মান সংসদ সদস্য এবং আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী চলতি বছরের শুরু থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজে নেমে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও জেলা সফর করছেন, জনগণের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন, ভোট চাইছেন। আমি যেটা বুঝি তাতে নির্বাচনী প্রস্তুতির এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় কৌশল নির্ধারণ করা হবে। তবে সেটা আগামী বছরের মার্চ এপ্রিলের দিকে হতে পারে বলে দলের মধ্যে একটা জোর আলোচনা রয়েছে। এদিকে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের নেতাদের সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র।