৪৪ বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে ব্রাজিলকে মরণকামড় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল পেরু। কিন্তু ধারে-ভারে ব্রাজিল ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। মাঠের খেলায়ও তার স্পষ্ট প্রতিফলন। ফেভারিটের মতোই জিতল ব্রাজিল। মারাকানার উদ্যানে হলুদ ফুল ফুটিয়ে এক যুগ পর কোপার সিংহাসনে বসল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। রোববার রিও ডি জেনিরোর ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে কোপার ফাইনালে পেরুকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বহুদিন পর শিরোপা উৎসব করল ব্রাজিল। এর আগে ২০০৭ সালে সর্বশেষ কোপা জিতেছিল সেলেকাওরা। লাতিন আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসরে এটি ব্রাজিলের নবম শিরোপা। নিজেদের আঙিনায় কোপার আয়োজন করে কখনও শিরোপাবঞ্চিত হয়নি ব্রাজিল। এবারও ফাইনালে ১০ জনের দল নিয়ে বাজিমাত করল স্বাগতিকরা। গ্রুপপর্বে ব্রাজিলের কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া পেরু ফাইনালে যথাসাধ্য লড়াই করেছে। আসরের প্রথম দল হিসেবে ব্রাজিলের জাল কাঁপিয়েছে। কিন্তু দুর্দান্ত ব্রাজিলকে মাটিতে নামানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। দ্বিতীয়র্ধে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার আগেই একটি গোল করে এবং একটি করিয়ে ব্রাজিলের শিরোপা উৎসবের মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ৯০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে পেরুর কফিনে শেষ পেরেক ঠোকেন রিচার্লিসন। এর আগে ১৫ মিনিটে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জেসুসের বাড়ানো অসাধারণ এক পাস থেকে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন এভারটন।
৪৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে পেরুকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন অধিনায়ক পাওলো গুয়েরেরো। কিন্তু জেসুসের গোলে বিরতির আগেই ফের এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ৭০ মিনিটে জেসুস দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেও ব্রাজিলের আধিপত্যে ছেদ পড়েনি। উল্টো ৯০ মিনিটে তৃতীয় গোল হজম করে পেরু। কোপা শুরুর আগেই চোটের থাবায় দর্শক হয়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমার। কিন্তু এভারটন ও রিচার্লিসনের মতো তরুণরা সেই ধাক্কা অনুভূতই হতে দেননি। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন জেসুস। আক্রমণভাগের চেয়েও বেশি নজর কেড়েছে ব্রাজিলের জমাট রক্ষণ। ব্যক্তিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের দল হয়ে ওঠায় কোপায় ১২ বছরের শিরোপা-খরা কাটাতে পেরেছে সেলেকাওরা। গোটা আসরে সর্বোচ্চ ১৩ গোল করার বিপরীতে মাত্র একটি গোল হজম করেছে স্বাগতিকরা। বয়সকে সংখ্যা বানিয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বে দলকে পথ দেখিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী ডিফেন্ডার দানি আলভেস। তার হাতেই উঠেছে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ক্লাব ও দেশের হয়ে সব মিলিয়ে এটি আলভেসের ৪০তম শিরোপা। ফুটবল ইতিহাসে এত বেশি শিরোপা জেতার নজির নেই আর কারও। গোলকিপার আলিসন গড়েছেন কোপার এক আসরে সবচেয়ে কম গোল হজমের রেকর্ড। দেশের হয়ে কোপা জেতার আগে ক্লাব লিভারপুলকে জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও এবার সেরা গোলকিপারের স্কীকৃতি পেয়েছেন আলিসন। সব মিলিয়ে ব্যালন ডি’অরের অন্যতম বড় দাবিদার ভাবা হচ্ছে তাকে।
ব্যক্তিগত ও দলীয় মানদণ্ডে এমন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পরও ব্রাজিলের সাফল্যকে আগেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। চিলির বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে লাল কার্ড দেখার পর বিতর্কিত রেফারিং নিয়ে বিস্ফোরক সব মন্তব্যের একপর্যায়ে মেসি বলে বসেন, দুর্নীতির মাধ্যমে স্বাগতিক ব্রাজিলকে শিরোপা জেতানোর সব আয়োজন আগেই সেরে রাখা হয়েছে! গত পরশু রাতে শিরোপা উৎসবের ফাঁকেই মেসির সমালোচনা করে ব্রাজিল কোচ তিতে জানালেন, ‘আমরাও অনেক ম্যাচে বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয়েছি। মেসিকে এটা বুঝতে হবে। তার উচিত সম্মানের সঙ্গে কথা বলা। হার মেনে নেয়াও খেলার অংশ।’ সবচেয়ে দাঁতভাঙা জবাবটা দিয়েছেন ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা, ‘আমাদের ইতিহাসকে সম্মান করতেই হবে। আমাদের জার্সিতে পাঁচ তারকা দুর্নীতির মাধ্যমে আসেনি।’
কোপার সবচেয়ে সফল দল
দল শিরোপা
উরুগুয়ে ১৫
আর্জেন্টিনা ১৪
ব্রাজিল ৯
চিলি, প্যারাগুয়ে, পেরু ২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn