বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করে নাগরিকত্ব প্রদানের বিল পাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার করেছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচন জয়ী জো বাইডেন। ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যেই তিনি এর কার্যক্রম শুরু করবেন।

সম্প্রতি মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসি টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বাইডেন। তিনি বলেন, শিশুকালে মা-বাবার হাত ধরে বেআইনী পথে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর যারা বৈধ হতে পারেননি, অথচ এই দেশের আলো-বাতাসে বড় হয়েছেন, শিক্ষা লাভ করেছেন, তেমন ৮ লক্ষাধিক তরুণ অভিবাসীর জন্যে ওবামা প্রশাসন যে কর্মসূচি (ড্যাকা) শুরু করেছিলেন, সেটি অব্যাহত রাখা হবে। যাদের বয়স ৩০ বছরের নীচে তারাও গ্রিনকার্ড পাবেন। ড্যাকা প্রোগ্রামটি বাতিলের নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ স্থগিত করেছে।

১৯৯০ সালের পর প্রথমবারের মতো অনিবন্ধিত জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম মেক্সিকো থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী। পিউ রিসার্সের মতে, ২০১৩ সালে ১০.৫ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে প্রায় ৪.৯৯ মিলিয়ন মেক্সিকোর, ১.৯ মিলিয়ন মধ্য আমেরিকার এবং ১.৪৫ মিলিয়ন এশিয়ান ছিল। এখন অনেকাংশেই তা বেড়েছে। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অনাবন্ধিত অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের ইস্যুতে এর আগেও প্রেসিডেন্ট ওবামা একই অঙ্গীকার করে ইউএস সিনেটে কমপ্রিহেনসিভ বিল উত্থাপন করেছিলেন তার ডেমক্র্যাটিক পার্টির মাধ্যমে। রিপাবলিকানদের চরম অসহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে তা পাশ হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের জন্যে সর্বশেষ একটি অ্যামনেস্টির ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের আমলে। এরপর কেটে গেছে ৩২ বছর। এভাবেই বেড়েছে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা।

২০০৮ সালে বিদায়ের প্রাক্কালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আরেকটি আদেশ দিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর যারা অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হন, তাদেরকে নানা প্রক্রিয়ায় গ্রিনকার্ড ইস্যু করা হয়েছে। তবে যারা বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন তারা কোনো সুযোগই পাননি। জো বাইডেনের অঙ্গীকার অনুযায়ী হয়তো তেমন সোয়া কোটির মধ্যে এক কোটি ১০ লাখের ভাগ্য প্রসন্ন হবে। তবে এজন্যে দরকার হবে প্রতিনিধি পরিষদের মত ইউএস সিনেটেও ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা।

৩ নভেম্বরের নির্বাচন অনুযায়ী সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা ৪৮ আসন ধরে রেখেছে। রিপাবলিকানদের ৫০টি। জর্জিয়ায় দুই আসনের ‘রানঅফ’ নির্বাচন হবে ৫ জানুয়ারি। দুটিই ছিল রিপাবলিকানদের। সেগুলো ডেমোক্র্যাটরা দখলে সক্ষম হলেই বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাটদের অভিবাসন ইস্যুতে কিছু করার পথ সুগম হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অর্থাৎ উভয় দল সমান আসন পেলে ডেমোক্র্যাটরা ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যামলা হ্যারিসের ভোট পাবেন। তারা ৫১ ভোটের মালিক হতে পারলে অভিবাসন বিলটি পাশে আর কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, হাউজে এখনও ডেমোক্র্যাটরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। দুই দশকেরও অধিক সময় যাবত অবৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে লক্ষাধিক বাংলাদেশিও রয়েছেন। বাইডেনের সর্বশেষ এ অঙ্গীকারে করোনায় জর্জরিত কমিউনিটিতেও কিছুটা স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn