প্রথমবারের মত বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে পৌঁছাল বাংলাদেশ। শনিবার রোদ-বৃষ্টির দোলাচলের পর ইংল্যান্ডের জয়ে দুয়ার খুলল। তাতে এ-গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেরা চারের মঞ্চে পা রাখল টাইগাররা। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক সেরে রেখেছিল মাশফির দল। স্বাগতিক ইংলিশরা প্রথম দল হিসেবে সেমির টিকিট পেয়েছে আগেই। অস্ট্রেলিয়াকে বৃষ্টি আইনে ৪০ রানে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াও নিশ্চিত করল ইয়ন মরগানের দল। আর গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-২০১৭তে জয়হীন থেকেই টুর্নামেন্ট শেষ করল। মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল। শুক্রবার শুরুতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও পরে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর মহাকাব্যিক দুইশ পেরোনো জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশ। মঞ্চটা প্রস্তুত তখন থেকেই। প্রস্তুত ছিলেন কুশীলবরাও। তবে নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দুদলের সামনেই।

অনুঘটকও ছিল। সেটা বৃষ্টি। লড়াইটা তাই জমে ওঠার আভাস ছিল। সঙ্গে ব্যাট-বলের রোমাঞ্চ ছড়ানোর। আর তৃতীয় পক্ষের ভূমিকায় ছিল বাংলাদেশ। হাততালি দেয়ার বিনিময়ে যাদের চাওয়া ছিল ইংল্যান্ডের জয় বা বৃষ্টির অঝোর ধারা। মঞ্চের সেই খেলার ফাঁকে ব্যাট-বলের রোমাঞ্চ যেমন ছড়াল, অনুঘটকও হাজির হল। পড়ল হাততালিও। তাতে দিন শেষে নায়ক ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে দিয়ে দর্শক বাংলাদেশের তুমুল করতালিও মাঝে মাঠ ছাড়ল ক্রিকেটের জন্মভূমির দলটি। তার মাঝেই অবশ্য হাজির হয়েছিল অনুঘটক। অজিদের ২৭৭ সংগ্রহ গড়ার পর ত্রিশ পেরোতেই ৩ উইকেট নেই ইংলিশদের। বাংলাদেশের দর্শকদের মনোকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা। সেটি ঝড় তুলল। আর বৃষ্টি হয়ে আছড়ে ফেলল এজবাস্টনের আকাশ ভেদ করে। স্বস্তি ফিরল লাল-সবুজের মনোকাশে। তখন খেলা বন্ধ। বাংলাদেশের দর্শকরা হিসেব কষায় ব্যস্ত। ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলেই বাঁচে টাইগারপ্রেমীরা। তাতে অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট হত বাংলাদেশের সমান ৩ করে। কিন্তু অজিদের কোন জয় নেই, টাইগারদের একটি জয়; মাশরাফিদের জন্য খুলে যাবে সেমির দুয়ার।

কিন্তু মিনিট বিশের পরেই স্বস্তিটা উধাও। ক্ষণিকের বৃষ্টি বিলাসের পর চকচকে রোদ। খেলা মাঠে গড়াল। কিছুক্ষণ পর উধাও হওয়ার পালা অস্ট্রেলিয়ার স্বস্তির। দেখতে দেখতে মরগান (৮৭) ও স্টোকসের (১০২*) জুটি পৌঁছাল ১৫৯ রানে। যে জুটি অজিদের সর্বনাশ ডেকে আনল শেষ অবধি, সেটাই আবার মিউজিক্যাল চেয়ার ঘুরে স্বস্তি ফেরাল লাল-সবুজের মনোকাশে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ৪০.২ ওভারে ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে ২৪০ রান তোলার পর আবারো হাজির বৃষ্টি। এরপর আর খেলাই গড়াল না। আম্পায়ারদের খেলা শেষের ঘোষণার সঙ্গেই ম্যাচ পকেটে পুড়ল ইংল্যান্ড। আর বাংলাদেশ পকেটে পুড়ল বহুল কাঙ্ক্ষিত মহামূল্যবান সেমির টিকেট। তার আগে এজবাস্টনে শুরুতে ব্যাট করে তিনশর ওপরের দিকেই চোখ করে এগোচ্ছিল অজিরা। ওয়ার্নার (২১) ও ফিঞ্চের উদ্বোধনী জুটি ৪০ রানের। পরে স্মিথকে নিয়ে ৯৬ রানের প্রতিরোধ ফিঞ্চের। ফিঞ্চের (৬৮) পর হেনরিক্স (১৭) ফিরলেও ক্রিজ আঁকড়ে থাকলেন স্মিথ ও ট্রাভিস হেড। অধিনায়ক (৫৬) সাজঘরে হাঁটা দেয়ার পর বাকিটা পথ সামলে গেলেন হেড (৭১*)। তাতে চ্যালেঞ্জিং দিশা পেল অস্ট্রেলিয়া। ফেরার পরই রানে গতি কমে আসে অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু ৪টি করে উইকেট নেয়া মার্ক উড ও আদিল রশিদের প্রাপ্তিটা পরাজয়ের খাতায় না তোলার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। আর হয়ত সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের লড়াকু মানসিকতাকে। অদম্য সাহসীদের পক্ষে থাকার সুযোগটা কেই-বা হাতছাড়া করতে চায়। এই সাহসীরাই যে একদিন নাম লেখায় ইতিহাসের চূঁড়ায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn