‘৮ দিন নয়, আমার রায়হানকে যেন আট বছর ধরে দেখি না’
মো. রেজাউল হক ডালিম :: দু’চোখে অবিরাম অশ্রুধারা। কথা বলতে পারছেন না দমকে দমকে উঠা কান্নার চাপে। তিনি কথা বলছেন, আর কাঁদছেন। কিছুক্ষণ পরপরই মুছে যাচ্ছেন দু’চোখ। বুকের ভেতরে উথলে ওঠা এ কান্না থামানোর যে কোনো পথ নেই। আট দিন নয়, তার কলিজার টুকরা ছেলে যেন ৮ বছর ধরে তার থেকে দূরে। ৮ বছর থেকে তিনি তাঁর নাড়িছেড়া ধনকে দেখেন না। সংবাদ সম্মেলনে এমন করুণ আর হৃদয়বিদারক অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন রায়হানের গর্ভধারিণী মা সালমা বেগম। সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল ধানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ রায়হান আহমদের মৃত্যুর ৮দিনের মাথায় তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। রবিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়াস্থ গুলতেরা মঞ্চিলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য রাখেন রায়হানের মা সালমা বেগম। পরে ৬টি দাবি পেশসহ ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন স্থানীয় মুরুব্বি শওকত হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সালমা বেগম বলেন, আমার ছেলে কোনো দল করতো না। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার একটাই দাবি, আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
রায়হানের মা আরও বলেন, এলাকা এবং এলাকার বাইরেও আমার ছেলের কোনো শত্রু ছিলো না। তাই, আকবর এবং তার সহযোগিদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার ছেলেকে হত্যার আসল কারণ জানা যাবে। সালমা বেগম বলেন, আমার ছেলে রায়হান অত্যন্ত সহজ-সরল টাইপের। সকালে একবার ঘুম থেকে উঠার পর আবার ঘুমিয়ে যেতো। পরে ঘুম থেকে উঠে বিকাল ৩টার দিকে ডিউটিতে যেতো। আর তার মেয়ের জন্মের পর থেকে তো আরেকটু দেরি করে ডিউটিতে যেতো। বাড়িতে থাকা সময়টুকু মেয়ের সঙ্গে খেলা করেই কাটাতো রায়হান। ডিউটি শেষ হলে দ্রুত বাড়িতে চলে আসতো সে মেয়ের টানে। রায়হানকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে অমানুষরা। এখন তার আড়াই মাস বয়েসি মেয়েটি কী করবে? আমি কীভাবে বুকে পাথর বাঁধবো? সংবাদিকদের আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টাকায় তো আর আমার ছেলে হারানোর ক্ষতিপূরণ হবে না। আমি শুধু এটাই চাচ্ছি যে- আমার ছেলের হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হোক। কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেও আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না। ক্ষতিপূরণ একটাই- আমার ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।