হক ফারুক আহমেদ -অন্যপ্রকাশের সামনে কিছুটা উচ্চস্বরে কর্থাবার্তা শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল- একজন পাঠক বেশ ক্ষোভ ঝাড়ছেন। বলছেন, আপনারা হুমায়ূন আহমেদের রচনাসমগ্রের ১১ এবং ১২তম খণ্ড কেন এখনও আনছেন না। একুশে গ্রন্থমেলার অর্ধেক তো শেষ। আর কবে আনবেন? আমি আগের ১০ খণ্ডই কিনেছি। বাকি দুই খণ্ডের জন্য আর কত অপেক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত কিছু দিনের মধ্যে বাকি দু’খণ্ড আসবে- এমন আশ্বাস পেয়ে অন্যপ্রকাশ থেকে বিদায় নিলেন আহির আলম নামের ওই পাঠক।  ঐতিহ্য থেকে শরৎসমগ্র কিনেছেন মোহাইমেন নামে এক পাঠক। এতদিন পর শরৎসমগ্র কেনার প্রসঙ্গ টানতেই তিনি বললেন, কিছু লেখকের লেখা চিরকালই ভালো লাগে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তেমনই একজন লেখক। আমি তো সব পড়েছি। বাচ্চারা বড় হচ্ছে, ওরাও যেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপালের লেখা পড়ে, জানে, সেজন্যই শরৎসমগ্র কেনা। আসলে প্রিয় লেখকের রচনাবলি সংগ্রহে রাখতে চান পাঠকরা। রচনাবলি বা রচনাসমগ্র যাই বলি না কেন- এর সুবিধা হলো একসঙ্গে সব লেখা সংগ্রহে থাকে। পছন্দমতো পড়ে নেয়া যায়। তাই রচনাবলি বা রচনাসমগ্রের আলাদা চাহিদা আছে। রচনাবলির প্রতি পাঠকদের আলাদা চাহিদার আরেকটি বড় কারণ, এতে খরচ কম পড়ে। আলাদা আলাদা করে প্রিয় লেখকের সব বই কিনতে যত খরচ পড়ে তার চেয়ে অনেকটা কম দামে রচনাবলি বা রচনাসমগ্র সংগ্রহ করা যায়।

বইমেলায় বাংলা ক্ল্যাসিক বলতে যা বোঝায় সেসব লেখকের রচনাবলি ছাড়াও বেশ কিছু নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলী প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ আকারে, আর কয়েকটি এক দুই খণ্ডে এসেছে। বাকি খণ্ডগুলো বছর দুয়েকের মধ্যেই প্রকাশ হবে বলেও জানা গেছে। মেলায় পুঁথিনিলয় এনেছে বুক পকেটের সাইজে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসমগ্র ‘বুক পকেটে রবীন্দ্রনাথ’। ২৫ খণ্ডের এই রবীন্দ্রসমগ্র আনা হয়েছে মূলত রবীন্দ্র-পাঠকে আরো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। বিশ্বসাহিত্য ভবন নিয়ে এসেছে কথাসাহিত্যিক শওকত আলী রচনাসমগ্র। ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ নিয়ে এসেছে হাসান আজিজুল হকের রচনাবলি-২। একই প্রকাশনা থেকে প্রকাশ হয়েছে সেলিনা হোসেনের রচনাবলি-২। আগামী থেকে প্রকাশ হয়েছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের রচনাবলি ৩ ও ৪। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘উপন্যাস ত্রয়ী’। আনিসুল হকের ‘কবিতাসমগ্র’ প্রকাশ করেছে অনন্যা। অবসর এনেছে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস সমগ্র ১৫ ও ১৬। সর্বাধিক বিক্রীত বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’ : এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৃতীয় গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়াচীন’। বইমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বললেন, যেভাবে বিক্রি হচ্ছে মনে হচ্ছে ২১ ফেব্র“য়ারির মধ্যে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এর বিক্রি পঞ্চাশ হাজার কপি ছাড়িয়ে যাবে। মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় পিয়াস মজিদ রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি’ গ্রন্থের আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশ নেন কবি শিহাব সরকার ও গবেষক ড. ইসরাইল খান।

সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। আলোচকরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সূতিকাগার বাংলা একাডেমির সঙ্গেও তার সম্পর্কটি অতীব নিবিড়। অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক, তথ্যসমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি গ্রন্থটিতে লেখক পিয়াস মজিদ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বাংলা একাডেমির ভূমিকা এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাংলা একাডেমির সম্পর্কটি একজন গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। যারা বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন তাদের কাছে গ্রন্থটি সমাদৃত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। সেলিনা হোসেন বলেন, পিয়াস মজিদ রচিত গ্রন্থটি মূলত বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক চেতনাকে ধারণ করেই রচিত। সাংস্কৃতিক চেতনা দিয়েও যে সংগ্রাম করা যায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। ভাষা আন্দোলনের পর থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমির দীর্ঘ অভিযাত্রার ইতিহাস ও অর্জন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ গ্রন্থ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মাসুদুজ্জামান, মাহবুব আজীজ, জাহানারা পারভীন এবং আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শিরিন ইসলাম, আজিজুল বাসার এবং মনিরুল ইসলাম।

লেখক বলছি : রোববার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসরুর আরেফিন, সোহেল হাসান গালিব, সৈয়দ জাহিদ হাসান এবং আলতাফ শাহনেওয়াজ।

নতুন বই : গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৬টি। এর মধ্যে অনন্যা এনেছে রাবেয়া খাতুনের ‘মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমগ্র’, শোভা প্রকাশ এনেছে ড. আবুল আহসান চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু : অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্মৃতি-অনুধ্যানে’, একই প্রকাশনী এনেছে তারেক শামসুর রেহমানের ‘চীন বিপ্লবের ৭০ বছর’, কথাপ্রকাশ এনেছে রেজানুর রহমানের ‘আবাসভূমি’, বাংলা একাডেমি এনেছে পিয়াস মজিদের বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি’, অনন্যা এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘কয়েকজন মেয়ে’, অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘তোমার আলোকে রহিব জাগিয়া’, মাহবুব রেজার ‘নামিল আঁধার’, পাঠক সমাবেশ এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘জলেশ্বরী : উপন্যাস সংগ্রহ (২য় খণ্ড), ঐতিহ্য এনেছে আবদুল হাইয়ের ‘বিশ্বাসের বাতায়ন’, চিত্রা প্রকাশনী এনেছে শিহাব সরকারের ‘আমার পূর্বজরা’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে মিনার মনসুরের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু-মিত্র’, স্বকৃত নোমানের ‘বানিয়াশান্তার মেয়ে’, বিদ্যা প্রকাশ এনেছে মফিদুল হকের ‘ব্যক্তিত্ব ও বাঙালি সমাজ’, অনুপম প্রকাশনী এনেছে ড. বিশ্বজিৎ রায়ের ‘রাধারমণের অপ্রকাশিত গান’, ভবেশ রায়ের ‘নলেজপিডিয়া-৩’, আবিষ্কার এনেছে আবু আককাস আহমেদের ‘হুমায়ূন আহমেদ চেতনার আকাশ’ উল্লেখযোগ্য।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn