পীর হাবিবুর রহমান-বারবার বলছি, একটা সর্বগ্রাসী মূল্যবোধহীন অবক্ষয়ের পাপের সমাজ অজগরের মতো গিলে খাচ্ছে আমাদের। আমাদের বিবেক, মূল্যবোধ, রুচিবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দর্শন- এক কথায় একটি আদর্শিক সমাজকে দিনে দিনে গিলে খাচ্ছে। একদল অবৈধ অর্থ-ক্ষমতার গরম সহ্য করতে পারছে না। সীমাহীন লোভের দাম্ভিক পাপে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। মূল্যবোধসম্পন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশ এতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। আরেক অংশ অসহায়। সংস্কৃতির সংঘাত বিরাজমান। আরেকদল সুবিধাবাদী। কাপুরুষ। হঠাৎ কাঁচা টাকার মালিক বনে যাওয়া একদল নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিই নয়, নাম-পরিচয়হীন সমাজের বাসিন্দারাও অবৈধ পথে অঢেল অর্থবিত্তের মালিক হয়ে দাম্ভিকতার শিখরে বাস করছে। ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। ক্ষমতা যুক্ত হলেই সংবিধান, আইন, বিধিবিধান তো মানছেই না, মানুষকে মানুষ মনে করছে না। বেপরোয়া গুন্ডামিতে অশোভন আচরণে অশ্লীল কর্মকান্ডে ডুবতে ডুবতে হাবিয়া দোজখের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। নিজেরা অঢেল অর্থ-সম্পদ-ক্ষমতা নিয়ে হাবিয়া দোজখেও যেন থাকতে পারছে না। শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষদেরও সেখানে টেনে নিতে চাচ্ছে। দুনিয়াতেই সমাজে আজ তারা যে হাবিয়া দোজখ তৈরি করছে, সেখানে সেই জাহান্নামের আগুনে সমাজকে টেনে নিতে চাচ্ছে। সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে সেই আগুনে পোড়াচ্ছে। টেকনাফে যে অপরাধ ঘটেছিল, সরকার তার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না করতেই সিলেটে পুলিশের পলাতক এসআই আকবরের হাতে রায়হান নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এমসি কলেজ থেকে বেগমগঞ্জসহ নোয়াখালী অঞ্চল ও বিভিন্ন এলাকায় পাশবিক রোমহর্ষক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ইমাম, মাদ্রাসাশিক্ষক এমনকি আধুনিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ধর্ষণ ও ছাত্রদের বীভৎস বলাৎকারের ঘটনার বিরুদ্ধেও সরকার অ্যাকশনে যাচ্ছে। অপরাধীর দল বা পেশা কিছুই দেখা হচ্ছে না।

সরকার আইন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ এটাই যে, যেখানে অপরাধী যেই হোক, এমনকি নিজ দলের হলেও ক্ষমা করছে না। আইনের আওতায় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। তিনি তাঁর অঙ্গীকার রক্ষা করছেন। গোটা সমাজ পর্নোগ্রাফি থেকে সাইবার ক্রাইমে আক্রান্ত। কিছু পুলিশ বিতর্কিত হলেও গোটা প্রতিষ্ঠান নয়। পুলিশই অপরাধীদের ধরছে। র‌্যাবই পাকড়াও করছে। এত অপরাধ দিনে দিনে চারদিকে পুলিশ-র‌্যাবকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুরান ঢাকার প্রতাপশালী এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার বডিগার্ড মো. জাহিদকে এক বছর করে জেল দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ছয় মাস ও অবৈধ মাদক রাখার দায়ে দুজনকে আরও ছয় মাস জেল দেওয়া হয়। নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর করার কারণে এমন শাস্তি।

রবিবার সন্ধ্যার পর কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত গাড়ি থেকে নেমে এসে হাজী সেলিমপুত্র নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে মারধর করেন। নৌ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা গাড়িতে লাগায় পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে মারধর করা হয়। তার স্ত্রীকেও অপদস্থ করা হয়। ক্ষমতার দম্ভ, অর্থ ও পেশিশক্তির বর্বর অহম তাদের দেখতে হয়েছে। রাতেই ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই হাজী সেলিমপুত্রের বাসভবন ঘেরাও করে তল্লাশিই চালানোই হয়নি, রিমান্ডই হয়নি, দেহরক্ষীসহ জেলে পাঠানো হয়েছে। এটাকেই বলা হয় অপরাধীকে শেখ হাসিনা সরকারের ছাড় না দেওয়ার কঠোর নীতি। আর হাজী সেলিম ও তার পুত্ররা যা করে আসছেন, সেটিকে বলা হয় আদর্শহীন রাজনীতির গুন্ডাতন্ত্রের দাম্ভিকতার বহিঃপ্রকাশ। মানুষ আনন্দে বলছে, ‘বাঘে ধরলে ছেড়ে দেয়, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না। ’ এমপিপুত্রের বাড়িতে কি ভয়ঙ্কর রোমহর্ষক টর্চার সেল! এরা বহিষ্কার হয় না কেন? দল থেকে কতকটা বখাটে লোক ও বিতর্কিত এমপি তাড়িয়ে দিলে কী হয়?

রাজনীতি যতক্ষণ আদর্শিক না হবে সমাজ ও পরিবার যতক্ষণ মূল্যবোধের ধারায় নীতি-নৈতিকতার ওপর না দাঁড়াবে ততক্ষণ সমাজে অপরাধীরা যে পেশায় থাকুক, বেপরোয়া উন্মত্ত হয়ে উঠবে। একের পর এক ঘটনা ঘটবে। আর সরকারকে পাকড়াও অভিযান চালাতে হবে। সন্তানের বাবা-মা হওয়া সহজ, কিন্তু আদর্শিক সন্তান গড়ে তোলা কঠিন। পিতা অন্যায় করলে মানুষের সঙ্গে অসদাচরণ করলে, দখলবাজি, অর্থ পাচার ঘুষ-দুর্নীতির সীমাহীন পথ গ্রহণ করলে তার সন্তান সে পথেই অগ্রসর হবে। তার সামনে সেটিই তখন আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। পিতা-মাতা নৈতিক মূল্যবোধে আদর্শিক জীবনব্যবস্থায় পারিবারিক বন্ধনে পরিচালিত হলে সন্তানরাও সে পথে অগ্রসর হয়। তাদের কাছে এটাই আদর্শ হয়ে ওঠে।

লোভের বিষাক্ত সমাজে আজ যে সর্বগ্রাসী অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, এ কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই প্রতিরোধ করতে পারবে না, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিসমূহকেও এগিয়ে আসতে হবে। নষ্টদের উল্লাসনৃত্যকালে তাদের স্রোতে গা ভাসানো কোনো সামাজিক মর্যাদার বিষয় নয়। নৈতিক অপরাধে অপরাধী হওয়ার বিষয়। সমাজে আজ অনুশোচনা, আত্মগ্লানি আত্মশুদ্ধি আত্মসংযম যেন নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। গোটা সমাজকে নষ্টদের হাত ধরে বিকৃতির অন্ধকারে পাপাচারে নিমজ্জিত করা হচ্ছে। এখানে আদর্শবানদের নীতিমানদের আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থায় এটা চলতে থাকলে প্রকৃতির বৈরী আক্রোশের শিকার হতে হবে। পাপ বাপকেও ছাড়ে না- কথায় আছে। ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, অর্থ পাচারের মতো অপরাধের লাগাম যেমন টেনে ধরতে হবে তেমনি সমাজের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত শনির রাহুদের হাতে রাজনীতি তুলে দেওয়া যায় না। রাজনীতির অঙ্গন থেকে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বের করে দেওয়া সব দলের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে শাসক দল আওয়ামী লীগই দলকে অপরাধী-মুক্ত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আরও জোরালো করতে পারে। সুবিধাবাদী দুর্নীতিবাজরা দুঃসময়ে থাকে না। দেশ ও এলাকা ছেড়ে পালায়। অপদার্থ নেতৃত্ব ও কোনো কাজে আসে না। জনমত টানবে কী? জনগণের তাড়া খায়। গণবিরোধী ভূমিকা নেয়। সম্প্রতি আমার এক লেখা পড়ে কথা নেই বার্তা নেই গুজব ছড়িয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শত শত সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমার উত্তরার অ্যাপার্টমেন্টে বর্বর হামলা চালিয়ে যে তা-ব করেছে এতে সবাই স্তম্ভিত। আমি নিজেও নির্বাক। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের বৈঠক করে নিন্দা ও অপরাধীদের গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ১৪ দলের সমন্বয়কারী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমুও নিন্দা জানিয়ে এটিকে অশনিসংকেত বলেছেন। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ, জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশাসহ অনেকেই নিন্দা জানিয়েছেন। বিএফইউজে-ডিইউজে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছে। একজন লেখক সাংবাদিক হিসেবে আমার লেখার শক্তি ছাড়া, চিন্তাশীল জগৎ ছাড়া কোনো অর্থ বা পেশিশক্তি বলে কিছুই নেই। থাকার কথাও নয়। কিন্তু এ বর্বর হামলার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া কেউ বিবৃতি দেয়নি। সারা দেশে সাংবাদিকসমাজসহ নাগরিকরা প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন। এ ভালোবাসা মাথায় তুলে নিয়ে শুধু বলতে চাই, আজন্ম বিশ্বাস করেছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আমার নেতা ও আদর্শ। মুক্তিযুদ্ধই আমার অহংকার। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই আমার স্বপ্ন। ’৭১-এর পরাজিত বর্বর পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমার জন্মের ঘৃণা। এ বিষয়গুলোতে আমার জীবনবোধ ও চিন্তাধারা পরিষ্কার। এখানে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। মানুষই আমার দল। মানুষের স্বার্থেই আমার লেখা ও চিন্তা। আমার আদর্শের প্রশ্নে যত বড় অন্ধকার শক্তির আঘাত আসুক না কেন, মাথা আমি নত করতে আসিনি। নির্জীবের দীর্ঘ জীবনের চেয়ে বীরের স্বল্প জীবন উত্তম মনে করি। জীবনকে এমনিতেই সবখান থেকে রুচির অবক্ষয়ে গুটিয়ে এনেছি। সীমিত পরিসরে চলছে সামাজিকতা। কোনো সরকারের কাছ থেকে কোনো ব্যক্তিগত বৈষয়িক সুবিধা কখনো নিইনি, অনেকবার বলেছি। এমনকি মন্ত্রী ও সচিবদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরার অভ্যাস নেই। তদবির কাকে বলে শিখিনি। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোতে তৃপ্তি পাই। এটা অহংকার নয়, সবার প্রতি সম্মান রেখে নিজের প্রতি সম্মান ও মর্যাদাবোধ রক্ষা করা। কিন্তু আমার আদর্শ বঙ্গবন্ধু শব্দ থেকে উৎসারিত যে সাহস আমি অর্জন করেছিলাম, সেটি কখনো হারাতে যাব না। মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তের ঋণ আজ আমরা অনেকে ভুলে গেছি। কিন্তু সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যে উদার গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, সেখানে আমাকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি আমি ভোগ করতে গিয়ে যে কোনো পরিণতি বহন করতে রাজি আছি। এ দেশটার জন্য বঙ্গবন্ধু সারাটি জীবন সংগ্রাম করেছেন। ১৩টি বছর জেল খেটেছেন। গোটা পরিবারসহ বিশ্বাসঘাতকদের হাতে নিহত হয়েছেন। এ দেশটির জন্য লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী কত নির্দয় নিপীড়ন ভোগ করেছেন। আমি তাদেরই উত্তরাধিকারিত্ব বহন করি। কবি নাজিম হিকমতের মতো কিংবদন্তিরা মানুষ ও মানবতার জন্য জীবনের দীর্ঘ সময় জেল নির্যাতন ভোগ করেন। বেনজামিন মোলায়সের মতো আফ্রিকান কবি ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে যান। আমরা লেখক সাংবাদিকরা আমাদের দায়দায়িত্ব ভুলে গিয়ে অনেকে আজ গোটা দেশপ্রেমকে, মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে হারিয়ে ফেলি। অনেকে দৃশ্যমান দাস হই। পদ ও পদকের কাঙাল হয়ে ঘুরি। আমার জন্মের শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে আপস ও সখ্য রাষ্ট্রের বিশ্বাসঘাতকদের হতে পারে। সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক হতে পারে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, লাখো শহীদের প্রতি, সম্ভ্রমহারা মা-বোনের প্রতি দায়বদ্ধ দেশপ্রেমিক মানুষের প্রেম হতে পারে না। ওদের ’৭১-এর অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। যারা এ বর্বর পাকিস্তানের আইএসআইর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। যারা পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয় তারা বাংলাদেশের বিশ্বাসঘাতক। আইএসআই এ ভূখ-ের জন্য আজন্মের অভিশাপ। এদের দোসররা বিশ্বাসঘাতক।

একদল বিকৃত নীতিচ্যুত অপেশাদার নানামুখী অন্ধ দাসরা প্রেতাত্মার মতো আজ শুধু আমার বাড়িতেই বর্বর আক্রমণ করেনি, এর আগেও তাদের নিম্নরুচির বিকৃত মিথ্যাচারের জঘন্য প্রচারণা চালিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গণমাধ্যমের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ইদানীং তুমুলভাবে দানবীয় শক্তিতে আক্রমণ করছে। একে রুখতে হবে। আমি এসব বিকৃতি কর্মকান্ডকে পায়ের হাঁটুর নিচে পাগলা কুত্তার কামড় ছাড়া আর কিছু ভাবী না। আর মানুষের সঙ্গে নিবিড় মনোজগতের সম্পর্ক রাখি। জীবনে কম দেখা হলো না! কত বিচিত্র মানুষের সঙ্গে, কত আকর্ষণীয়, জ্ঞানী-গুণী সৃষ্টিশীল মেধাবী মানুষও দেখা হলো। কত নিঃসঙ্গ উচ্চশিক্ষিত মর্যাদাবান অভিজাত মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। অনেকের প্রতি যেমন শ্রদ্ধায় মাথা নুয়েছে, মুগ্ধ হয়েছি, তেমনি কত মর্যাদাহীন সস্তা মানুষ দেখেও বিস্মিত হইনি। দিন যত যাচ্ছে সমাজে ভালো মানুষের আকাল পড়লেও ফুরিয়ে যায়নি।

তবে মিথ্যা দম্ভ আর অহংকারে কুৎসিত বিকৃত মানুষরা যখন নিজেদের পাপের আত্মগ্লানি অনুশোচনায় ভোগে না তখন অবাক হই। নষ্টদের দাপটের সমাজে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত থেকে এসে কাঁচা টাকার বিকৃত মালিকও নিজেদের হাইসোসাইটির সদস্য ভাবে, নানা লোভ পোষে। লোভ পূরণ না হলে চরম হতাশায় ডোবে। তখন ঘেন্না লাগে। আমরা একটা সর্বগ্রাসী ক্ষুধার্ত অসুস্থ সমাজের মুখোমুখি। যার যেখানে তুপ্ত সুখী থাকার কথা সেখানে কেউ থাকতে চাইছি না। বিকৃতির গর্ভে বিলীন করে দিচ্ছি সব রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্ব। গরিব হওয়া লজ্জার নয়। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ব্যাংক লুটেরা, অর্থ পাচারকারী প্রতারণা, লজ্জার, করুণার। লোভ জঘন্য। স্বপ্ন মুগ্ধকর। পৃথিবীতে সবার টাকা হতে হবে কেন? লেখক সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, ডাক্তার, প্রকৌশলীদের কেন অঢেল অর্থবিত্ত ভোগ-বিলাস হতে হবে? পৃথিবীতে দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী, শোবিজ জগতের সুপারস্টারদের টাকা হয়। বিলাসী জীবন হয়। সরকারি কর্মচারী, ডাক্তার, প্রকৌশলী যখন ঘুষখোর হয় তখন ঘেন্না লাগে। ওদের কেবল লজ্জা লাগে না!

আমরা কখনো ওয়ান-ইলেভেনের মতো অসাংবিধানিক অশুভ শাসন চাই না। কিন্তু ভুলতে চাই না সেদিন কী পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হয়েছে। চারদিকের একেক ঘটনা যেন অমঙ্গলের মালা গেঁথে চলেছে। কোথায় যেন কারা সাপলুডু খেলছে। শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নে, করোনার মহাসংকটে জয়ী হয়ে যখন দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তখন কারা যেন বেপরোয়া সর্বনাশা খেলায় নেমেছে। আশঙ্কা হয়। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে মুরগি মিলনের মতো রাস্তার টোকাই সন্ত্রাসীরা একসময় সমাজকে অভিশপ্ত অশান্ত করেছিল। আজ তাদের করুণ পরিণতির কথাও কেউ মনে করে না। সমাজে কোনো অন্যায় অপরাধ সন্ত্রাস-দুর্নীতি চলতে দেওয়া যায় না। এ মুহূর্তে মহাজোটের সুসংহত ঐক্য ও সরকার সাজিয়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াবার সময়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির এক কাতারে শামিল হওয়া অনিবার্য। গণমাধ্যমকে পাথরের মতো শক্ত ঐক্যে দাঁড়ানোর সময়।

আত্মমর্যাদাবোধ মূল্যবোধ ও পারিবারিক সংস্কারই যদি না থাকে কীসের মধ্যবিত্ত? কীসের ব্যক্তিত্ব আর লাজলজ্জা অনুশোচনা! যে মানুষের ভুলের অনুশোচনা নেই, কাউকে ঠকানো, প্রতারণা বা নিজের সম্মানহানির গ্লানি অনুশোচনা নেই সে কি পূর্ণাঙ্গ মানুষ? কেবল যেনতেন টাকা, যেনতেন জীবন কাটানো, যেনতেন ভোগ-বিলাস চতুরতা কখনো জীবন নয়। জীবনের দর্শন ও ন্যূনতম নীতিবোধ থাকতে হয়। এ জীবনে দেখেছি অনেক, সব হিসাব মেলাতে পারিনি। কখনো পারবও না। তবে মর্যাদা ও মূল্যবোধ ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। হয়তো ভুল! কিন্তু এ ছাড়া তৃপ্তির কিছু নেই। মাঝেমধ্যে নিজেকে বড় একা, নিঃসঙ্গ মনে হয়। মনে হয় হয়তো একটি জীবনের অনেকটাই প্রতারিত। এ সমাজে আমি নিজেই অচল, কাউকে কিছু দেব কী, কালের যাত্রাপথে কখন দমবন্ধ জীবনে চলে যাবে হুট করে। অনাগত প্রজন্ম আমার কর্মময় চিন্তাশীল মানুষের জন্য কাজ নিয়ে, কী ভাবল হয়তো তাও মূল্যহীন হয়ে যাবে। নাজিম হিকমতের প্রেমপত্রের মতো কেউ বলবে শোকের আয়ু এক বছর। কিন্তু জেনে রাখুন আমার পাঠকরা, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তান বিবেক যেখানে সেখানে বেঁধে দিতে আসিনি। আমার এই মাথা কোনো অন্যায় অপরাধের কাছে নোয়াবার নয়। লেখার জবাব সাহস থাকলে লেখায় দিন। বিকৃতি ও বর্বর সন্ত্রাসের পথ ছাড়ুন। লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn