আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের ভয় করি না : সু চি
অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটকে তার সরকার যেভাবে মোকাবিলা করছে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের ভয় করেন না তিনি।মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া সরাসরি টেলিভিশন ভাষণে এ কথা বলেছেন তিনি। এই প্রথমবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেন সু চি। ২৫ আগস্ট থেকে সংকট শুরু হওয়ার পর এ বিষয়ে কথা না বলায় আন্তর্জাতিক মহলে কঠোর নিন্দার মুখে পড়েন তিনি।রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৪ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি, বসতভিটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খুন-ধর্ষণসব নারকীয় সব তাণ্ডব চালানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। জাতিসংঘের মতে, এই সহিংসতা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধন’। সহিংসতা বন্ধের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনকে মাথায় রেখে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে আসছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সু চি বললেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের ভয় করি না।’রাখাইন রাজ্যে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করে সু চি বলেছেন, রাখাইনে সংঘর্ষকবলিত সব মানুষের দুর্ভোগ তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। রোহিঙ্গা মুসলিমরা কেন পালিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সু চি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালিয়ে যাচ্ছে- এতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’ যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে, তার নিন্দা করেন তিনি।স্থানীয় সময় সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলনের এক পার্শ্ব বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের জন্য সু চির প্রতি আহ্বান রাখে। এ বৈঠকে বাংলাদেশ, সুইডেন, ডেনমার্ক, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অংশ নেয়।মঙ্গলবার তার ভাষণে সু চি বলেছেন, ‘কারো ঘাড়ে দায় চাপানো বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া মিয়ানমার সরকারের ইচ্ছা নয়।’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে মিয়ানমারের অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণের ভয় করেন না তারা। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সশরীরে এসে সমস্যাগুলো দেখে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সু চি বলেন, অভিযান পরিচালনার সময় আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরপরাধ বেসামরিক লোকজনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য সব দিক বিবেচনায় রাখতে বলা হয়েছে।আইনের শাসনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক সু চি বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী ঘটনা এবং আইনের শাসন অমান্য করাকে কঠোর বিচারের আওতায় আনা হবে।’সু চি বলেন, রোহিঙ্গাদের মর্যাদার বিষয়টি যেকোনো সময় পর্যালোচনা করতে প্রস্তুত তার সরকার। বৈধ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি তিনি। তথ্যসূত্র : বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইন