কাতারভিত্তিক আল–জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়েছে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতার নীতি–নৈতিকতা না মেনে। গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড এক বিবৃতিতে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আল–জাজিরার প্রতিবেদনটি সম্পাদকদের বৃহত্তম সংগঠন এডিটরস গিল্ডের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পুরো বিষয় একটি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, অথচ শিরোনাম করা হয়েছে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত বিশেষ কিছু অভিযোগের বয়ান দিতে গিয়ে প্রমাণহীনভাবে ‘প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ টার্মটা ব্যবহার করা মন্দ সাংবাদিকতা বলে মনে করে এডিটরস গিল্ড। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্মিত ও পক্ষপাতদুষ্ট একটি তথ্যচিত্র কোনোভাবেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত হতে পারে না। পুরো ডকুমেন্টারির ভিত্তি হলো একজন মানুষের কিছু অনানুষ্ঠানিক ও আড্ডার আলাপ, যার কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ এতে উপস্থাপিত হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাঙ্গেরি ও ফ্রান্সে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এর উৎস দেখানো হয়নি।কেবল মুখের কথাতেই বলা হয়েছে সরকারের কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে বিরাট অর্থ লেনদেনের কথা। এসব অভিযোগের সমর্থনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কোনো প্রশাসনিক বক্তব্যও আল-জাজিরা দেয়নি। সামিকে ‘জীবননাশের হুমকি’ দেয়া ই–মেইলের অরিজিনাল পেজ ছিল না। ফলে এর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। হাঙ্গেরি, ফ্রান্স বা মালয়েশিয়ার বিচরণকারী হিসেবে যাঁদের দেখানো হয়েছে এবং তাঁদের পাসপোর্ট জালিয়াতি, অন্য কাগজ জালিয়াতি, অর্থ পাচার, ইত্যাদি অপরাধের যে বর্ণনা রয়েছে, এসব বিষয়ে সেসব দেশের সরকারের দিক থেকে কারও কোনো বক্তব্য না থাকায় এডিটরস গিল্ড এই তথ্য চিত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পুরোটা সময় গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও দেখানো হয়েছে। এটি একটি মানসম্পন্ন সংবাদমাধ্যম করতে পারে না। যাদের বিরুদ্ধে এত কিছু, তাদের বক্তব্য না থাকায় এটি সম্পূর্ণ সাংবাদিকতা পরিপন্থী কাজ হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছরের অনুসন্ধানের পর ‘তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি’ বলাটা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে এডিটরস গিল্ড।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্পাই ওয়্যার কেনার বিষয়টি সরকারের নিজস্ব নীতি এবং সেটিও যে সত্যিই ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে কেনা হয়েছে, তার প্রমাণ নেই তথ্যচিত্রে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলে একধরনের সাংবাদিকতার মতোই এখানে দুজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার কথা বলে তাঁদের ছবি ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিছক চাতুর্য ছাড়া আর কিছু নয়। এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রে একজন অন্যতম সাক্ষাৎকারদাতা বাংলাদেশের আদালত কর্তৃক দ-িত। এডিটরস গিল্ড যৌক্তিক প্রমাণ দিয়ে সাংবাদিকতার স্বার্থে যেকোনো সংবাদ বা অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানায়। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো কিছু প্রচারিত হলে তা প্রকারান্তরে গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn