সেই ছেলেটির কথা স্পেনের কাতালান শহর বার্সেলোনা কখনো ভুলবে না। আর্জেন্টিনা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা ছেলেটির বাবা জর্জ রীতিমতো হিমশিম ছেলেটির প্রুরাল নিউমোনিয়া নিয়ে। অপুষ্টিতে শীর্ণ শরীর। একমাত্র ফুটবল মাঠে বল পায়ে পড়লে ভয়ঙ্কর ছেলেটি। তেকাঠি তখন তার একমাত্র নিশানা। একদিন গাড়ি নিয়ে যেতে  বার্সেলোনার এক ফুটবল স্কাউটের নজরে পড়লো ছেলেটার অসাধারণ স্কিল। বার্সেলোনার মিল্ক টিথ  গ্রুপে জায়গা পেলো ছেলেটি। তের বছর বয়সে যখন বার্সেলোনার জুনিয়র টিমে খেলার জন্য সই করার আগে একটা পেপার ন্যাপকিনে নিজের সইটি করেছে লিওনেল মেসি তখন সে প্লুরিসি আর নিউমোনিয়া থেকে মুক্ত।  চোখে তার একরাশ স্বপ্ন। দশ বছরের মধ্যে মেসি বিশ্বের সেরা ফুটবলার। আরো দশ বছরের মধ্যে জেতা  হয়ে গেল ছয়টি ব্যালন ডি ওর। তেত্রিশ বছর বয়সে পৌঁছে মেসির সিদ্ধান্ত, বার্সেলোনায় আর নয়।  প্রাক্তন ডাচ খেলোয়াড় রোনাল্ড কোম্যান বার্সেলোনার কোচ হতেই মেসির এই সিদ্ধান্ত। কোম্যানকে অপছন্দ নাকি টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মনোমালিন্য? দুর্জনেরা আরো একটি কথা বলছেন,  তেত্রিশের মেসি কি বার্সেলোনায় খেলার চাপ আর নিতে পারছেন না বলে এই সিদ্ধান্ত? তিনটির যে কোনো একটি হতে পারে। বাস্তবটা হচ্ছে মেসি বার্সা  ছাড়ছেন। তিনি বৃটেনের ম্যানচেস্টার সিটিতে যেতে পারেন, এমনটাই খবর। কিন্তু কে যেন বলেছিল,  চায়ের কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে ফারাকটা বড় ভয়ঙ্কর।  

লিও মেসি বার্সেলোনা ছাড়ছে আর আটলান্টিকের সব জল শুকিয়ে গেছে ব্যাপারটা প্রায় সমার্থক। কুড়ি বছরে মেসির নাম বার্সেলোনার সঙ্গে সিনোনিমাস হয়ে গেছে।  শহরের মেয়র থেকে ক্যাব ড্রাইভার। গৃহবধূ থেকে দেহপসারিণী সবাই মর্মাহত মেসির এই সিদ্ধান্তে। মেসি  তো বার্সেলোনার প্রতীক। তার কাস্তেলডেফেলসের  ভিলার  বোগেনভেলিয়ার ঝাড়, বাস্কেটবল কোর্ট,  প্রাইভেট বিচ, আর্জেন্টাইন মুদির দোকান, আর্জেন্টাইন রেস্তরাঁ, প্রতিবেশী বন্ধু লুই সুয়ারেজের বাড়ি, গাভা মার এ মেসির বাবা-মায়ের প্রাসাদোপম বাড়ি, শহরের অভিজাত এলাকা পেদ্রোবেসে মেসির এপার্টমেন্ট হাউজ… এসবই ছেড়ে যেতে হবে মেসিকে। ব্যাপারটা সুখী রাজপুত্রকে দুঃখী করার মতোই ঘটনা। পুরনো কোচ পেপ গার্দিওয়ালার সঙ্গে মেসির সম্পর্কের কারণে তার ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড,  প্যারিস সেন্ট  জার্মেই, ইন্টারমিলান একদম হাত গুটিয়ে বসে আছে ভাবার কোনো কারণ নেই। প্যারিস সেন্ট জার্মেই এ আছেন নেইমার। তার সঙ্গে জুটি বাঁধার সম্ভাবনাও একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। মনে রাখতে হবে,  মেসির বয়স এখন তেত্রিশ। আরো দু বছর বড়জোর তাকে ফর্মে পাওয়া যাবে। মেসিও এই সময় চাইবেন এমন  খেলোয়াড়ের সাহচর্য যার সঙ্গে তিনি সঙ্গত করেন।  সুতরাং লিও মেসিও চাইবেন পাশে এমন খেলোয়াড় যিনি তার এই পরিণত বয়সে তার খামতিগুলো ঢেকে দেবেন। সুতরাং নেইমার ডি সিলভার সঙ্গে জুটি বাঁধার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না ফুটবল বিশ্ব।   

মেসি ম্যান সিটি অথবা অন্য কোনো ক্লাবে যান, বার্সেলোনায় এখন গভীর শোকের সময়… যেন জাতীয় শোক। মেসি স্পেন থেকে চলে গেলে জাতীয় রাজস্ব  কমবে, কমবে পর্যটক আকর্ষণ, দেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। লা একুইপ সংবাদপত্র লিখেছে, মেসিশূন্য বার্সেলোনা হবে লবণবিহীন  সসেজ।  নামে কাটবে বার্সেলোনা, ভারে নয়। লা একুইপের মতে, মেসি চলে গেলেও প্রাকৃতিক নিয়মে চন্দ্র সূর্য উঠবে বার্সেলোনায়।  কিন্তু চাঁদের কিরণে সেই স্নিগ্ধতা থাকবে না, সূর্যে থাকবে না তেজ।  কারণ, মেসি একই সঙ্গে ফুটবলের চন্দ্র এবং সূর্য।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn