বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া অনলাইন ও বিকেন্দ্রীকরণের পর ঘুষ-দুর্নীতি বহুগুণে বেড়েছে তাই অনলাইন পদ্ধতি বাদ দিয়ে পূর্বের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, অনলাইনে এত বেশি দুর্নীতি তা আগে কেন বলেননি। তাহলে তো আরো আগেই অনলাইন পদ্ধতি বাদ দিয়ে দিতাম। এমপিওভুক্তির দুর্নীতি প্রসঙ্গে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত এমপিওদুর্নীতির প্রতিবেদন শতভাগই সত্য।

রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আয়োজিত দিকনির্দেশনামূলক এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ উক্ত মন্তব্য করেন। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, স্যার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা একবার অষ্পষ্ট দেখে এমপিওর আবেদন রিজেক্ট করেন। আরেকবার অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখে রিজেক্ট করেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের হাতেই নিয়োগ আবার তারাই এমপিওভুক্তি করেন। এ কারণেই দুর্নীতি বেশি হয়। শিক্ষকদের ভোগান্তি বেড়েছে।

অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং) ড. মো: সেলিম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, অনলাইনে এমপিওতে মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। উপজেলা, জেলা ও উপ-পরিচালকের দপ্তরে দুর্নীতি হচ্ছে।বিকেন্দ্রীকরণে দুর্নীতি বেড়েছে। এর একটা সমাধান চাই আমরা। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কোথাও দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হলে তা মাউশি’র মহাপরিচালক বা মন্ত্রীকে সরাসরি জানানোর জন্যও তিনি ভুক্তভোগীদের প্রতি আহবান জানান মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের কাজের সমন্বয় নেই। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বিদেশ সফর প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, একই কর্মকর্তা ঘুরেফিরে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। সবাইকেই সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাউশি’র কর্মকান্ডে অনেক সাফল্য রয়েছে। এ কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। মাউশি’তে মানুষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কাজ অনেক বেশি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা কাজের জন্য আসেন, তাদেরকে সন্তুষ্ঠ করে দিতে হবে। মানুষের কাছে ভাল ইমেজ তৈরি করতে হবে। মাউশি’র কাজের মান আরো উন্নত করার জন্য মন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাউশি’র কর্মকান্ড আরো গতিশীল করতে হবে। কাজে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সততা ও নিষ্ঠা প্রমান করতে হবে।  কর্মকর্তাদের দক্ষতা আরো বাড়াতে হবে এবং এই দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে। তিনি মনিটরিং কার্যক্রম আরো জোরদার করার জন্য নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগাতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। প্রকল্প পরিচালকদের কাজ রিভিউ করে প্রকল্পগুলোতে যোগ্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমস্যা ও ব্যর্থতাগুলি চিহ্নিত করে তা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন বলেন, সেবাগ্রহীতাদের আরো সহজে কিভাবে সেবা দেয়া যায় সে বিষয়টি ভাবতে হবে। আইটি’র যুগে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। কম সময়ে সেবা প্রদান করতে হবে। সরকারি কর্মচারীরা নিজেদের প্রভু না ভেবে জনগনের সেবক ভাবতে হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn